উপকূল অতিক্রম করেছে মোখা

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৩; সময়: ৯:২৩ অপরাহ্ণ |
উপকূল অতিক্রম করেছে মোখা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উপকূল অতিক্রম করার পর ক্রমশ শক্তি হারাতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

রোববার (১৪ মে) আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক সই করা সন্ধ্যা ৬টার ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ ২২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যা ৬টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। একই সঙ্গে একটি দুর্বল হয়ে রাখাইন রাজ্যের সিটুয়ে, মিয়ানমারে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। মোখা স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।

এদিকে কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরেও সতর্ক সংকেত নামানো হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এর আগে বিকেল ৩টায় আবহাওয়ার ২১তম বিশেষ বুনেটিনে সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।

সেখানে বলা হয়েছিল, বিকেল ৩টায় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র সিটুয়ের কাছ দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের স্থলভাগের ওপর অবস্থান করছে। সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। তবে দুর্বল হলেও ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে প্রচণ্ড গতিবেগে বাতাস বইছে।

বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক আসাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজার জেলা, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের ওপর ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। টেকনাফে বেলা সাড়ে ১১টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে।

সেন্টমার্টিনে দুপুর ১টায় ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে, ২টায় ১২১ কিলোমিটার, ২টা ২০ মিনিটে ১১৫ কিলোমিটার, আড়াইটায় ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়টির বড় অংশ মিয়ানমারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে বলেও জানান তিনি।

ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে আছড়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত তিনজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস বলেছে, রাখাইনে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে অনেক ভবনের ছাদ উড়ে গেছে ও অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। উপকূলে আছড়ে পড়া শক্তিশালী এ ঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে লক্ষাধিক মানুষ মঠ, প্যাগোডা ও স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোখায় কারও মৃত্যুর তথ্য জানা না গেলেও সেন্টমার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত সোমবার (৮ মে) সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ওইদিন মধ্যরাতে এটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। মঙ্গলবার (৯ মে) সন্ধ্যার পর সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে নিম্নচাপ এবং গতকাল বুধবার (১০ মে) সকালে তা গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকালে সেটি আরও শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নেয়।

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সেন্ট মার্টিনেই ১২ শ ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গতির বাতাস নিয়ে রোববার (১৪ মে) বিকাল ৩টার দিকে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা।

সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, মোখার তাণ্ডব চলাকালে জোয়ার ছিল না। সমুদ্রের বুকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি দাঁড়িয়ে আছে। সেন্ট মার্টিনের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্বীপের ছোটবড় হাজারখানেক গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছ ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন ১১ জন। কেউ নিহত হয়নি।

সেন্ট মার্টিনের আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিন শুভ বলেন, মোখার তাণ্ডব যখন শুরু হয় তখন মনে হয়েছিল আর হয়তো বা কারও সঙ্গে দেখা হবে না। চোখের সামনে বাতাসে ঘরবাড়ি উড়িয়ে যেতে দেখছি। দ্বীপের মানুষ অনেক আতঙ্কিত হয়ে আছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে মোখার তাণ্ডবে অনেক ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সহয়তা দেওয়া হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, মোখার তাণ্ডব সন্ধ্যার পর পুরোদমে শিথিল হয়ে গেছে। সিগন্যাল কমে এলে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আড়াই লাখ মানুষ ঘরে ফিরতে পারবেন। সেন্ট মার্টিনে ১২ শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধস্ত ও ১১ জন আহত হয়েছেন জেলায় ১০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে