ঘূর্ণিঝড় মোখায় তিনজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৩; সময়: ৮:৫৭ অপরাহ্ণ |
ঘূর্ণিঝড় মোখায় তিনজনের মৃত্যু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মঠ, প্যাগোডা ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) খবরে মিয়ানমারের আবহাওয়া বিভাগের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রটি রোববার বিকেলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিত্তওয়ে শহরের কাছে ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়ে।

মিয়ানমারের সামরিক তথ্য অফিস জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে সিত্তওয়ে, কিয়াউকপিউ ও গওয়া শহরে ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মুঠোফোনের টাওয়ার, নৌকা ও ল্যাম্পপোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তারা জানায়, ঘূর্ণিঝড়টিতে দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের কোকো দ্বীপপুঞ্জের ক্রীড়া ভবনগুলোর ছাদও ধসে পড়েছে।

সিত্তওয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবী টিন নিন ওও বলেছেন, সিত্তওয়ের তিন লাখ বাসিন্দার মধ্যে চার হাজারের বেশি মানুষকে অন্য শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ শহরের উচ্চভূমিতে অবস্থিত মঠ, প্যাগোডা ও স্কুলের মতো মজবুত ভবনগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় অনেক মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন মিটারের বেশি উঁচু এলাকায় বাস করেন, সেখানকার বাসিন্দারা মনে করছেন তাঁদের এলাকা পর্যন্ত ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস পৌঁছাতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘ঝড় এখনো আঘাত হানেনি, তাই আমাদের খুব একটা অসুবিধা নেই। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ এবং পর্যাপ্ত টয়লেট নেই।’

স্থানীয় একটি দাতব্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লিন লিন বলেছেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লোক আসায় সিত্তওয়ের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার নেই।

মিয়ানমারে ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রতিনিধি টিটন মিত্র এই টুইটে জানিয়েছেন, ‘মোখা আঘাত হেনেছে। দুই মিলিয়ন মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসলীলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত এবং ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা প্রয়োজন।’

রোববার সকালে মিয়ানমারে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি উদ্ধারকারী দল তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে জানিয়েছে, তারা এক দম্পতির লাশ উদ্ধার করেছে। টাচিলেক শহরে ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে নিজ বাড়িতে চাপা পড়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্য মান্দালয় অঞ্চলের পাইন ও লুইন শহরে একটি বটগাছ উপড়ে পড়ে পিষ্ট হয়ে একজন ব্যক্তি মারা গেছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম আরও জানিয়েছে, সিত্তওয়েতে প্রবল বাতাসে একটি মুঠোফোনের টাওয়ার উপড়ে পড়েছে এবং অন্যান্য ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০০৮ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস মিয়ানমারে আঘাত হানে, সে সময় ইরাবতি নদীর ডেল্টার আশপাশের জনবহুল এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এতে কমপক্ষে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যান এবং কয়েক হাজার বাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা পানিতে ভেসে যায়।

পুনে শহরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির জলবায়ুবিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে।

জলবায়ুবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় এখন অনেক দিন তাদের শক্তি ধরে রাখতে পারে। ২০২০ সালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান পূর্ব ভারতে আঘাত হানে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

কোল বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মহাসাগর উষ্ণ থাকে এবং বাতাস অনুকূল থাকে, ততক্ষণ ঘূর্ণিঝড়গুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের তীব্রতা ধরে রাখে।

ঘূর্ণিঝড় বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষ করে যেগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে