রাবি অধ্যাপক ড. তাহেরের দুই খুনির ফাঁসি ঠেকাতে রিট

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৩; সময়: ১০:০০ অপরাহ্ণ |
রাবি অধ্যাপক ড. তাহেরের দুই খুনির ফাঁসি ঠেকাতে রিট

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এস তাহেরকে। ওই খুনের মামলায় ড. তাহেরের সহকর্মী একই বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরের ফাঁসি বহাল রাখেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

আপিল ও রিভিউ পিটিশন খারিজের পর আসামিদের ফাঁসি কার্যকরে জেল কোড অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হন কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের সেই উদ্যোগ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট করেন খুনির স্বজনরা। এখন কারা কর্তৃপক্ষ ওই দুটি রিটের সর্বশেষ অবস্থান কী সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি পাঠিয়েছেন। গত ৪ মে এই চিঠি পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন বলেন, এই খুনের মামলায় বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ডের যে রায় দিয়েছিলো তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা। সেই আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি করে হাইকোর্ট দুই খুনির ফাঁসি বহাল রাখেন। এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে যান। সেখানে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ তাদের নিজ নিজ যুক্তি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এখন রিট আবেদনে আসামি পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ (গ্রেপ্তার ও রিমান্ড প্রসঙ্গে) আনা হয়েছে তা আপিল শুনানিতে তুলে ধরেছিল আসামি পক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও এর জবাব দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আসামি পক্ষের বক্তব্যকে খণ্ডন করেছেন।

তিনি বলেন, যেখানে আপিল বিভাগ বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সেখানে পুনরায় একই বিষয়ে রিট এনে আসামিদের ফাঁসি কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দেওয়া আদালতের রায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন বলেই মনে করি।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্ত শেষে দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়, ড. তাহের জীবিত থাকলে কখনোই পদোন্নতি পাবেন না-এমন ধারণা থেকেই ষড়যন্ত্র ও খুনিদের প্রলোভন দিয়ে তাকে খুন করান মিয়া মো. মহিউদ্দিন। এরপর তার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খুনিরা ড. তাহেরকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেন।

এই মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেয়। খালাস দেওয়া হয় দুজনকে। ফাঁসির রায় দেওয়া হয় মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সম্বন্ধি আব্দুস সালামকে।

হাইকোর্ট ২০১৩ সালে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি বহাল রাখেন। সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয় নাজমুল ও সালামকে। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। সেই রায় পুনবির্বেচনা চেয়ে রিভিউ করেন তিন আসামি। আপিল বিভাগ সকল রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়।

এরপরই গত সপ্তাহে এই রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ পায়। সেই রায়ের অনুলিপি পৌঁছে কারা কর্তৃপক্ষের হাতে। করা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরে উদ্যোগ নেন। এরপরই মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের পক্ষে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট করা হয়। সেই রিট দাখিলের তথ্য গত ৩ মে ই-মেইলযোগে কারা কর্তৃপক্ষকে জানান ওই দুই আসামির কৌসুলি এম তাজুল ইসলাম।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের আটক, গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তাই এক আসামির ভাই ও আরেক আসামির স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেছেন। রিটে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রিভিউ খারিজের পর কারা কর্তৃপক্ষ জেল কোড অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেন। এর আগে আসামি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয় প্রাণভিক্ষার আবেদন। সেই আবেদন নাকচের পর ফাঁসি কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে