কচুয়ায় পোকা দমনে স্থাপন হচ্ছে আলোর ফাঁদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৩; সময়: ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ |
কচুয়ায় পোকা দমনে স্থাপন হচ্ছে আলোর ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক,কচুয়া : চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় বোরো ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে আলোর ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা হচ্ছে। এতে বোরো ধান খেত সুরক্ষায় আলোর ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহায়তায় কৃষকেরা ‘আলোর ফাঁদ’ স্থাপন করেছেন। এতে পোকা দমনসহ ক্ষেতে ক্ষতিকর কি ধরনের পোকা রয়েছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।

সোমবার সন্ধ্যায় পৌরসভার ব্লকে কোয়া-চাঁদপুর বাজার এলাকায় বোরো ধান ক্ষেতে ‘আলোর ফাঁদ’ স্থাপন করা হয়। ধান পাকার আগ পর্যন্ত ক্ষেতে ওই আলোর ফাঁদ কার্যক্রম চলবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কচুয়া উপজেলায় ১২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বোরো ধান মৌসুমে সচেতনতার অভাবে অনেক কৃষক জমিতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে ফসলের জমির উপকারী অনেক পোকা মারা যায়। আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয়ের পর ধানের জমিতে পিলা করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছ।

কোয়া-চাঁদপুর গ্রামের শহীদ উল্যাহ মুন্সী,রফিক,ইউসুফ এর বোরো ধান ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ধানের জমির পাশে তিনটি খুঁটি দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক বাতি ঝোলানো হয়েছে। বাতির নিচে একটি পানির পাত্র রাখা হয়েছে, পাত্রে ডিটারজেন্টমিশ্রিত পানি। বাতি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ফসলের জমির বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা এসে নিচে রাখা পানিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। এভাবেই আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।

ডনলাম পাড়া গ্রামের কৃষক পরেশ,কাউছার ও খলিল বলেন, তিনটি বাঁশের লাঠি, একটি বৈদ্যুতিক লাইট, আর পানি রাখার একটি পাত্র দিয়ে তৈরি করা হয় আলোর ফাঁদ। সন্ধ্যাবেলা জমির পাশে বসানো হয় এই ফাঁদ। অন্ধকার ধানের জমি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পোকা ছুটে এসে আলোর ফাঁদে আটকে পড়ে।

আটকে পড়া পোকার মধ্য থেকে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিত করে এসবের গায়ে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। তারা আরো জানান, এর আগে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার করে কোন সুফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু আলোর ফাঁদের মাধ্যমে পোকা চিহ্নিত করে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার করে সুফল মিলছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিটু মোহন সরকার বলেন, বোরো ধান আবাদ করেছে অনেক কৃষক। কিন্তু পোকা মাকড়ের কারনে অনেক ধান হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু গাছে শীষও বের হয়েছে । এই সময়ে ধানে বাদামি ঘাসফড়িং (কারেন্ট পোকা), সবুজ ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, গান্ধি পোকা, মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করে। পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করতে বোরো ধান খেতে আলোর ফাঁদ ব্যবহার শুরু করা হয়।

তিনি আরও বলেন, কৃষকেরা ক্ষতিকর পোকা দমনে ধানক্ষেতে সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন এতে কৃষকের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হয়। এ কারণে পোকা দমনে আলোর ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কোনো খরচ নেই। তিনি বলেন কারেন্ট পোকার আক্রমণে অল্প সময়ের মধ্যে খেতের ধান বিনষ্ট করে ফেলে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার নিজাম উদ্দিান জানান, উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এটি বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি। অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষ এই প্রক্রিয়া ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, দিন দিন এটি জনপ্রিয় হচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে