তাপপ্রবাহে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৩; সময়: ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ |
তাপপ্রবাহে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  গত কয়দিন ধরে ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সন্দ্বীপ, রাঙামাটি, ফেনী, বান্দরবান, খেপুপাড়া, ভোলা অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন তাপপ্রবাহ বিস্তৃত হতে হতে ৪৩ জেলায় গিয়ে ঠেকেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই হাঁসফাঁস অবস্থা আরও সপ্তাহখানের থাকবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার চুয়াডাঙ্গায় ছিল দেশের সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টি না থাকায় আরও সপ্তাহ খানেক মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। এ সময় কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, আগামী প্রায় এক সপ্তাহ বড় ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দেশের উত্তর-পূর্বের সিলেটে অল্প বৃষ্টি হতে পারে; তাও আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের আগে নয়।

থার্মোমিটারের পারদ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে থাকেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

এপ্রিলে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেসঙ্গে মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টি এবং দু-একদিন তীব্র কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

তাপপ্রবাহে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রখর রোদের মধ্যে বাইরে বের হচ্ছে ছাতা নিয়ে। শ্রমিকদের তীব্র রোদে গামছা মাথায় দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ, যাঁদের এই তীব্র গরমে রাস্তাঘাটে কাজ করতে হয়।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। আগের দিন শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘শিগগির তাপদাহ যাচ্ছে না। আরও কয়েকদিন এ তাপদাহ চলবে। তবে বৃষ্টি হলে কিংবা আকাশ মেঘলা হলে তাপদাহ কমে আসবে।’

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেডক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০২১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করে, যার ফলে দেখা গেছে, ঢাকায় হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আর হিটওয়েভের কারণে বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বয়স্ক মানুষ, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা, খেলোয়াড় এবং যাঁরা বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পেশার সঙ্গে জড়িত তাঁরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন তাপপ্রবাহের সময়। সরাসরি সূর্যের নিচে যাঁদের কাজ করতে হয় তাঁদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা বাড়ার ক্ষেত্রেও নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ২৬ বছর পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল বাংলাদেশে এবং ওইদিন তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে