যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে আটক হয়েছিলেন সুলতানা

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩; সময়: ৪:৪২ অপরাহ্ণ |
যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে আটক হয়েছিলেন সুলতানা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : একজন যুগ্ম সচিবের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল- এমন অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। তাকে আটকের সময় ওই যুগ্ম সচিব উপস্থিতি ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। নওগাঁ থেকে আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে মারা যান সুলতানা জেসমিন।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত ওই যুগ্ম সচিবের নাম এনামুল হক। নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাব আটক করার সময়ও ওই যুগ্ম সচিব সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নওগাঁর ঘটনা নিয়ে কথা বলেন ওই বাহিনীর মুখাপাত্র।

গত বুধবার সকালে সুলতানা জেসমিন নামের ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব। তাদের ‘নির্যাতনে’ ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করছেন। র‌্যাব এর আগে জানিয়েছিল, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মঙ্গলবার র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, যুগ্ন সচিব এনামুল হকের অভিযোগে তার উপস্থিতিতেই র‌্যাব নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে আটক করেছিল। পরে তিনি ‘অসুস্থ হয়ে পড়লে’ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

“যুগ্ম সচিবের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র প্রতারণা করে আসছিল। যুগ্ম সচিবের নাম ও পদবী ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নাম করে বা কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ আদায় করছিল চক্রটি। এ বিষয়ে ২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রথমে জিডি করেন এনামুল হক।

“জিডিতে তার ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে যে প্রতারণা করা হচ্ছে সেই অভিযোগ করেন। একজন নারী তার ফেইসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন এমন অভিযোগে তিনি আদালতে মামলাও করেন।”

সেই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে চক্রটিকে ধরার চেষ্টা করছিলেন জানিয়ে মঈন বলেন, সর্বশেষ ১৯ ও ২০ মার্চ তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা নেওয়ার তথ্য পান তিনি। প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন, ওই ঘটনার সঙ্গে আল আমিন নামে এক ব্যক্তি যুক্ত। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন জেসমিন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “গত ২২ মার্চ (বুধবার) এনামুল হক র‌্যাবের টহল টিমকে দেখতে পেয়ে অভিযোগ করেন। একটি ধর্তব্য অপরাধ হিসেবে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ জানাতেই পারেন তিনি। তখন এনামুল হকসহ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীকে আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হই।

“এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার সম্মুখেই ভূমি অফিসে কর্মরত জেসমিনকে আমরা আটক করি। সেখানে দুজন সাক্ষীও ছিলেন। সাক্ষী ও এলাকার লোকজনের সম্মুখে র‌্যাবের দুজন নারী সদস্য জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জেসমিন অকপটে সব স্বীকার করেন।”

জেসমিনের মোবাইলে এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি চলমান অবস্থায় পাওয়া যায় দাবি করে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, “তার মোবাইলে আমরা সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট পাই। যেখানে লাখ লাখ টাকার জমা রশিদের প্রমাণ আমরা পাই। তার মোবাইলে ২০-৩০ লাখ টাকা লেনদেনের বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।”

কমান্ডার আল মঈন বলেন, “সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করি। সেখানে সাক্ষীও ছিল। যুগ্ম সচিব এনামুল হকসহ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে জেসমিনের মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে প্রিন্ট করা হয়। আলামত সংগ্রহ শেষে যখন আমরা থানার উদ্দেশে যাচ্ছিলাম, মামলা করার জন্য তখন ওই নারী অসুস্থ বোধ করেন।

“দুপুর ১টার দিকে আমরা তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তার সঙ্গে কথা বলেন। তার বোন, ফুফু ও চাচাকে ডাকা হয়। এমনকি ভূমি অফিসে তার সহকর্মী ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকেও (ল্যান্ড) ডাকা হয়। তাদের উপস্থিতিতেই তার চিকিৎসা চলছিল।

“সন্ধ্যার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে রেফার করা হয়। সেখানে সিটিস্ক্যান করে তার স্ট্রোকের আলামত পাওয়া যায়। একদিন পর তিনি তিনি মারা যান। ওনার কী কারণে মৃত্যু হয়েছে সেখানে চিকিৎসকেরা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি পোস্টমর্টেমেও পাওয়া যাবে।”

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “জেসমিনকে হাসপাতালে পাঠিয়ে আমরা যুগ্ম সচিব এনামুল হককে বলি আপনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে থানায় যান। তিনি নিজে বাদী হয়ে তখন মামলা করেন।”

এদিকে, নওগাঁর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি কাজ করছে জানিয়ে মঈন বলেন, “এখানে যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে যে আমাদের হেফাজতে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমরা সোমবার একটি তদন্ত কমিটি করেছি। এখানে আমাদের সদস্যদের গাফিলতি রয়েছে কী না বা তার সঙ্গে অনৈতিক কিছু ঘটেছে কী না আমরা সেটা তদন্ত করছি।

“গাফিলতি পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতও আমাদের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন। সেগুলো আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আদালতে জানাব।”

ওই নারীর লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন তা আদালতকে জানাতে আদেশ দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে