পাঁচ গ্রহ ও চাঁদ পৃথিবী থেকে একই সরলরেখায় দেখা যাবে

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩; সময়: ২:৩৫ অপরাহ্ণ |
পাঁচ গ্রহ ও চাঁদ পৃথিবী থেকে একই সরলরেখায় দেখা যাবে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সৌরজগতের পাঁচ গ্রহ বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, ইউরেনাস ও মঙ্গলগ্রহ এবং পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ- মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে একই সরলরেখায় দেখা যাবে সন্ধ্যা থেকে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যার আকাশেও একই রেখায় দেখে গেছে তাদের, কোথাওবা খালি চোখেই দেখা গেছে এই দৃশ্য। আর এই বিরল দৃশ্যের নাম দেয়া হয়েছে ‘প্ল্যানেটারি প্যারেড’ বা গ্রহপুঞ্জের কুচকাওয়াজ। সোমবার সন্ধ্যার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পশ্চিম আকাশে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

গ্রহের এমন বিরল এক সরলরেখায় আসার দৃশ্য গত গ্রীষ্মে দেখা গিয়েছিল, তখন বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতির সাথে শনি গ্রহও ছিল। সন্ধ্যার পরপরই এই দৃশ্য দেখতে হবে কারণ বুধ ও বৃহস্পতি গ্রহ খুব দ্রুতই দিগন্তে মিলিয়ে যায়।

বাংলাদেশেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এই দৃশ্য দেখা যাবে। বাংলাদেশের আকাশে প্রায় রাত নয়টা পর্যন্ত দেখা যাবে শুক্র গ্রহ, যা বাংলাদেশে শুকতারা নামেও পরিচিত।

বাংলাদেশে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় মঙ্গল গ্রহ ও চাঁদ একই সরলরেখায় দেখা যাবে। এই দুই গ্রহ প্রায় সূর্যের সাথেই পৃথিবীর দিগন্তরেখায় অস্ত যায়। গ্রহ দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা যেখানে আলো কম, শহুরে কোলাহল নেই এবং দৃশ্যত কোনও বাধা নেই আকাশ দেখতে।

ব্রিটেনের স্কটল্যান্ডে ‘তারা’ দেখতে ভালোবাসেন এমন মানুষ গত রাতেই ভিড় জমিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডে খোলামেলা পরিবেশ এবং সুন্দর আকাশের জন্য পরিচিত একটা জায়গায়।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে জ্যোতির্বিদ, গবেষক এবং সৌরজগত নিয়ে আগ্রহ আছে এমন মানুষেরা গতরাতে এই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করেছেন, অনেকেই আবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন নিজেদের উচ্ছ্বাস ও বিস্ময়।

অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল ফর স্কটল্যান্ডের প্রফেসর ক্যাথেরিন হেইম্যান্স, এডিনবরার পোর্টোবেও সৈকত থেকে রাতের আকাশ দেখেছেন। তিনি বলেছেন, “রাতের স্বচ্ছ আকাশে এমন গ্রহের প্যারেড দেখার ব্যাপারটা চমকপ্রদ।”

রয়্যাল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোর্তিবিদ জ্যাক ফস্টার বলেছেন, “পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে মূলত গ্রহগুলো এবং চাঁদ একটা সরলরেখায় এসেছে। এমনিতে গ্রহগুলো কিন্তু এক রেখায় নেই, বরং তারা সৌরজগতে ছড়িয়ে আছে। যখন তারা অনেক দিন পর পর কাছাকাছি আসে তখন আমরা এভাবে দেখতে পাই।”

এই নিবন্ধে Twitterএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Twitter কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।

ইউরোপের সবচেয়ে গভীর কালো আকাশ দেখা যায় নর্থ ওয়েলসের, অ্যাঙ্গলেসি থেকে। সেখানকার লিন পেনিনসুলার ইনিস এনলি ইউরোপের প্রথম জায়গা হিসেবে আন্তর্জাতিক ডার্ক স্কাই স্যাঙ্কচুয়ারি স্বীকৃতি পেয়েছে।

অ্যাঙ্গলেসির ডার্ক স্কাই অফিসার ড্যানি রবার্টসন বলেছেন, খানিকটা মেঘ ছিল বটে তবু চোখের জন্য প্রশান্তিময় ছিল নর্থ ওয়েলসের রাতের আকাশ। আমি আমার বাড়ির পেছনে উঠোন থেকে আমি দারুণ একটা বাঁকা চাঁদ দেখতে পেয়েছি।

তার ঠিক ওপরে দেখলাম লাল আভা দেয়া মঙ্গল গ্রহ, সেখান থেকে একটু নিচে দিগন্তের দিকে জ্বলজ্বল করছিল শুক্র গ্রহ,” বলেন ড্যানি রবার্টসন। তিনি মনে করেন, “আরেকটু স্পষ্ট থাকলে আরও বেশ কটি গ্রহ দেখতে পাওয়া যেত, যেমন ইউরেনাস, এটা দেখতে টেলিস্কোপ লাগবে।”

স্কটল্যান্ডের সীমান্তে হেক্সহ্যামের কিলডার অবজারভেটরি থেকে ড্যান পাই বলেন, “গ্রহগুলোর সরলরৈখিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়”।

তিনি বলেন, “পুরো রাতজুড়ে এই গ্রহগুলোর দূরত্ব পরিবর্তন হয় এবং চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, আমরাও সূর্যের চারিদিকে আরেকটু ঘুরি এবং অন্য গ্রহগুলোর সূর্যকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ জারি রাখে”।

সন্ধ্যার পরপরই এই দৃশ্য দেখতে হবে কারণ বুধ ও বৃহস্পতি গ্রহ খুব দ্রুতই দিগন্তে মিলিয়ে যায়। এই পুরো দৃশ্যকে ‘ব্যালে’ নাচের সাথে তুলনা করেছেন ড্যান পাই, “এটা আমাদের জন্য একটা মহাকাশ থিয়েটার এবং আমরা অন্য গ্রহগুলোর ‘ব্যালে নৃত্যে’র সাথে নিজেদের সংযোগ খুঁজে পাই।”

মিজ রবার্টসন একজন নতুন জ্যোতির্বিদ, তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্যের ৯৮ শতাংশ মানুষই দূষিত আকাশের নিচে বাস করে। এটা লজ্জার বিষয় যে আমাদের ছায়াপথ আমরা নিজেরাই দেখতে পারিনা, নিজেদেরই দোষে”, বলেন তিনি। যখন আকাশে তাকাই আমরা টরাস, প্লেইডেস ও চাঁদ দেখি। যা গোটা মানবজাতির জন্য একই রকম দেখায়।

তিনি মনে করেন, অন্য অনেক ধরনের দূষণের চেয়ে আকাশের দূষণ তুলনামূলক সহজে পরিস্কার করা যায়। মিজ রবার্টসন বলেন, “আমরা যদি আলো পরিমিত রাখি তাহলে আকাশ আরও গভীর কালো দেখাবে, এভাবে সমাধান হবে।”

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে