বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩; সময়: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ |
বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭১ সাল জুড়ে পাকিস্তানের দারা বাংলাদেশে সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে রাজশাহীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৪ মার্চ) বেলা ১১ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সিনেট ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ রাজশাহীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শহীদ বুদ্ধিজবী ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও শহীদদের সন্তানদের দেশের মধ্যেই যুক্তি তুলে ধরতে হয় ‘একটি গণহত্যা হয়েছিল’। একটি স্বীকৃতির জন্য ঘুরতে হয়। শুধু বিশ্বের দ্বারেই নয় জনগণের দ্বারে দ্বারেও। স্বাধীনতার বহু বছর পর দেশেই জাতীয় গণহত্যা দিবস পেয়েছি ২০১৭ সালে। তাও এখনও আইনে স্পষ্ট অনেক কিছুই নাই। পাকিস্তানিরা প্রথম আঘাত করেছে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। তারা আমাদের আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত হেনেছে। এখন সেই বিষয় নিয়ে কুতর্কে জড়াতে হয়। আসেলে ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ, কতো জনকে হত্যা করা হয়েছিল এমন বিষয় নিয়ে কুতর্ক-বিতর্ক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর কোথাও যেনো গণহত্যা না হয় সেজন্য অতীতের গণত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। আর আমরা যারা শহীর পরিবারের সদস্যরা আছি শুধু ওই দিনটি দেখবো বলেই বেঁচে আছি।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরেই আমরা আবারও পাকিস্তানের উত্তসূরিদের পেয়েছি। ৭১ এর যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙ্গালি শহীদ হন। যাদের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১১১ জন বৃদ্ধিজীবী, ৭ হাজার যুদ্ধশিশু। উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৪টি গণ কবর। ১৯৭১ এর যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের দেয়া বিভিন্ন তথ্যসূত্রেই বলা হয়ছে তারা ৩০ অক্ষাধিক বাঙ্গালিকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে।

এসময় তিনি জাতিসংঘের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এখনো গণহত্যার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি মেলেনি। এমনকি দেশেও জাতীয় স্বীকৃতি পেতে দেরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশে একটি বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মূলে রয়েছে জামায়াত-শিবির। যাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বিএনপি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানো সুযোগ করে দিয়েছিল, দিয়েছিল বাংলাদেশের সংসদে বসার সুযোগ। দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভাজন দূর করা গেলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জাতি গঠন করা যাবে। একারণে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি রাজাকার, আলবদল ও আলশামসের তালিকা হওয়াও জরুরী।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বিকৃতি মিলছে না উল্লেখ করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ওয়ান বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহ আজম বলেন, বাংলাদেশে গণত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া গেলে যারা এই গণহত্যা চালিয়েছিল তারা বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না। ২৫ মার্চ সহ ১৯৭১ সাল জুড়ে বাঙ্গালি জাতির ওপর যা হয়েছিল তা ইতিহাসের পাতায় অভিশপ্ত একটি অধ্যায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। আসলে গণহত্যাকে স্বকিৃতি দিচ্ছেন না বিশ্ব মোড়লারাই। জাতিসংঘে ৫ টি দেশের ভেটো দেয়ার অধিকার য়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া মতো দেশ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এসব দেশের ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে এবং পাকিস্তানের সাথে তাদের বর্তমান সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্টই বোঝা যাবে আমরা কেনো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই গণহত্যার স্বীকৃতি পাচ্ছি না।

পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বাঙ্গলিকে গণহত্যা বিষয়ে সন্ধিহান করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক এবং যারা এটা করেছে তারা এ দেশের স্বাধীনতার শত্রু। নতুন প্রজন্মকে এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস সবাইকে জানতে হবে।

সভায় বক্তারা আরও জানান, স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসেও এই গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান কোন দিন তাদের ও নৃশংস কার্যক্রমের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি। আর সে কারণেই পাকিস্তানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে ওয়ান বাংলাদেশের উদ্যোগে ২৫ মার্চ দেশ জুড়ে একযোগে মানববন্ধন ও মোমবাতি প্রজ্বলন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ওয়ান বাংলাদেশের আয়োজনে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মো. রশীদুল হাসান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে