যে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হলো জাতিসংঘ প্রতিবেদনে

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩; সময়: ১২:১৯ অপরাহ্ণ |
যে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হলো জাতিসংঘ প্রতিবেদনে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন ও এর পরিণতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে চরম হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, টাইম-বোমের মতো টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে জলবায়ু সংকট। বিপর্যয় এড়ানোর সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিপদ থেকে বাঁচতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, সোমবার (২০ মার্চ) জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা `ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এতে ওঠে আসা তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সুইজারল্যান্ডে এক বৈঠকে বসেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে যে হারে কার্বন নিঃসরণ ঘটছে তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের যে সীমা রয়েছে, তা অতিক্রম করবে।

এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও নাগালের বাইরে চলে যাবে।

এ সীমার মধ্যে উষ্ণায়ন রাখা গেলে বিশ্বের প্রবালপ্রাচীর ও আর্কটিক সুরক্ষার বরফের স্তর টিকে থাকবে। অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলা ঠেকিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াও তাতে এড়ানো যাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানুষের কর্মকাণ্ড পৃথিবীকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে, যা ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি। এতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাস্তুসংস্থানে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। বিপর্যয়কর উষ্ণায়ন এড়াতে আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে টাইম-বোমার মতো। বিপর্যয় এড়ানোর সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিপদ থেকে বাঁচতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ওই প্রতিবেদনকে ‘মানবজাতির টিকে থাকার নির্দেশিকা’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘মানবজাতি এখন যেন এক খণ্ড ভাসমান বরফের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা কিনা দ্রুতই গলে যাচ্ছে।’

সেই সঙ্গে আইপিসিসির এ প্রতিবেদনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সরকারগুলোকে এতে ওঠে আসা বিষয়গুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আইপিসিসির ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবশেষ বড় পরিসরের প্রতিবেদন। এটি জলবায়ু সংকট কীভাবে উদ্ভূত হচ্ছে, তার একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন দেয়ার জন্য শত শত বিজ্ঞানীর ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপর্যয়ের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ঝুঁকি এড়াতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

গবেষকরা বলেছেন, ‘আমরা যত দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে পারব, তত দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে পারব।’

প্রতিবেদনে ওঠে আসা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘সব দেশকেই এক দশকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আরও তৎপর হতে হবে।

‘এসব লক্ষ্যমাত্রা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত কমিয়ে আনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সবার জন্য একটি বাসযোগ্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার সুযোগ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আমাদের এ সুযোগ এখন কাজে লাগাতে হবে।

‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় আরও আট বছর আগে ঐকমত্যে পৌঁছায় দেশগুলো। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে এ ঐকমত্যে পৌঁছায় তারা। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যাতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়, সে ব্যাপারেও সরকারগুলো পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

‘কিন্ত পৃথিবীর উষ্ণতা এরই মধ্যে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে।’

নতুন এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে এ প্যানেল গঠন করা হয়।

আইপসিসি বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়া নিয়ে জাতিসংঘকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। আইপিসিসির নতুন এ প্রতিবেদনের বিষয়েও একমত হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব দেশ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে