রমজান উপলক্ষ্যে ‘১ টাকা’ লাভে পণ্য বিক্রি করছেন শাহ আলম

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩; সময়: ২:৫০ অপরাহ্ণ |
রমজান উপলক্ষ্যে ‘১ টাকা’ লাভে পণ্য বিক্রি করছেন শাহ আলম

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পবিত্র রমজান এলেই যেন প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। এতে অসহায় হয়ে পড়ে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র পরিবারগুলো। সারা দিন রোজা রাখার পর অনেক পরিবারে জোটে না ভালো ইফতারও।

আর এ বিষয়টা মাথায় রেখে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের চরকুমিরা গ্রামের ব্যবসায়ী শাহ আলম গোটা রমজান মাসে মাত্র ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পুরো রমজান মাসে শাহ আলম যেসব পণ্য বিক্রি করবেন তার মধ্যে থাকছে- মুড়ি, ছোলা (বুট), খেজুর, খেসারির ডাল, বেসন, চিড়া ইত্যাদি। এসব পণ্য কেজিতে মাত্র ১ টাকা লাভে বিক্রি করবেন তিনি। এছাড়া আরও কিছু পণ্যে থাকছে বিশেষ অফার।

কেন এমন উদ্যোগ- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, আমি অনেক আগে থেকে ব্যবসা করি। চিন্তা করলাম রমজানে ১ টাকা লাভে ইফতারের পণ্য সামগ্রী বিক্রি করব।

যেহেতু এখান থেকে এলাকার লোকজনের স্থানীয় বাজারে যেতে-আসতে প্রায় ৪০ টাকা লাগে। বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি মালামালে প্রায় ৫ টাকা লাভ নিয়ে থাকে। তাই আমি উদ্যোগ নিলাম প্রতি কেজিতে ১ টাকা লাভ করব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক গরিব মানুষ আছে যারা বাড়তি দামে ইফতার সামগ্রী কিনতে পারেন না। তাই তাদের কাছে ১ টাকা লাভে ইফতারের পণ্য বিক্রয় করছি। তবে তাদের কাছে মালামাল বিক্রি করে অনেক সময় ১ টাকাও লাভ হয় না।

কারণ, মোট যে দাম হয় তার খুচরা অংশ তারা দেয় না। যেমন, অনেকে পণ্য কিনে মোট ১০৫ টাকা হলে খুচরা ৫ টাকা দেয় না। আবার ১ হাজার ৩০ টাকা হলে ১ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা দেয় না।

এই কারণে অনেক সময় ১ টাকাও লাভ হয় না। আমার শুধু চলার টাকা থাকে। তবুও আমি খুব খুশি কারণ গরিব-অসহায় মানুষ রমজানে ভালোভাবে ইফতার করতে পারবে।

এই গ্রামের বাসিন্দা রাজু হোসেন বেপারী বলেন, শাহ আলমের কাছ থেকে আমরা রমজানের জন্য যে মালামালগুলো কিনলাম তা বাজারের দামের তুলনায় কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা কম।

আবার বাজারে পণ্য কিনতে যাওয়ার জন্য যেই গাড়ি ভাড়া লাগত সেই টাকাও বেঁচে যাচ্ছে। তাই আমি তার কাছ থেকে অল্প অল্প করে পণ্য কিনছি। এগুলো শেষ হলে আবার কিনব।

স্থানীয় আরেক বৃদ্ধ আব্দুল ওহাব আলী বলেন, আমি শাহ আলমের কাছ থেকে খেজুর, ডাল, তেল, চিনি, আটাসহ ইফতারের সকল পণ্য বাজারের দামের চেয়ে কম দামে কিনেছি।

এখান থেকে আমাদের স্থানীয় বাজার একটু দূরে। বাজারে যেতে আসতে ৪০ টাকা ভাড়া লাগে। শাহ আলমের কাছ থেকে কিনলে সেই টাকাও বেঁচে যায়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার এ কাজকে সাধুবাদ জানাই। আমার কিছু পণ্য কেনার প্রয়োজন ছিল। তাই কিনেছি।

আমি সকল ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করছি, সংযমের মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার। আমি শাহ আলম ভাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন টিটু বলেন, দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে । তারা শুধু পবিত্র রমজান মাসকে টার্গেট করে পুরো বছরের ব্যবসার করার জন্য। আর আমাদের এই মানবিক দোকানদার শাহ আলম ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। এজন্য আমার ওয়ার্ডের সবার পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। তার কাছ থেকে পণ্য কিনে তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজের সকলের এই সমস্ত মানবিক দোকানদারদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কারণ এমন মানবিক লোক সমাজে পাওয়া যায় না। এটি বড় সেবা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে