দুর্গাপুরে বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনে নিহত আ.লীগ নেতা আজাহারের পরিবারের খোঁজ রাখে না কেউ

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩; সময়: ৮:১৬ অপরাহ্ণ |
দুর্গাপুরে বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনে নিহত আ.লীগ নেতা আজাহারের পরিবারের খোঁজ রাখে না কেউ

রবিউল ইসলাম রবি, দুর্গাপুর : বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার মেম্বারের মৃত্যুর ১৭ বছর পার হয়ে গেলেও এই পরিবারের খোঁজ রাখেন না কেউ। ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কয়ামাজমপুর গ্রামের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আজহার আলীকে আমগাছে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে জেএমবি সদস্যরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আজাহার আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের অনেক অবদান থাকলেও আজ তার পরিবারের কোনো সদস্যর মূল্যায়ন নেই। এমনকি সাংগঠনিক ভাবে মৃত্যুবার্ষিকীও পালন করা হয় না। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে পরিবারের স্বজনদের মাঝে।

শনিবার (১৮ মার্চ) শহীদ আজাহার আলী মেম্বারের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিক ছিলো। কিন্তু অনেকটা নিরবে-নিভৃতে এই দিনটি পার হয়ে গেলেও কেউ খবর নেননি। ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল নির্যাতনের পর দীর্ঘ দুই বছর অসুস্থ থাকার পর ২০০৬ সালের ১৮ মার্চ মারা যান আজাহার আলী মেম্বার। আজহার আলীর একমাত্র পুত্র হিটলার আলীকেও সর্বহারা সদস্য আখ্যা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। স্বামীর মৃত্যুর পর পুত্র হিটলারকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন আজহার আলীর স্ত্রী। কিন্তু একমাত্র পুত্র সন্তান হিটলার দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তখন নানা রোগ শোকে মারা যান আজাহার আলীর স্ত্রী।

দুর্গাপুরের পাশেই বাগমারায় আস্তানা গেড়েছিলেন সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই ও শায়ক আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমবি সদস্যরা। বিএনপি জামায়াতের মদদপুষ্ট জেএমবি সদস্যরা সেই সময় বেছে বেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের দমনে অভিযান চালান। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রকাশ্যেই তারা নির্মমভাবে নির্যাতন করতেন নিরীহ মানুষদের। তারই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে আমগাছের সাথে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন জেএমবি সদস্যরা। প্রাণে বেঁচে থাকলেও দুই বছর পঙ্গুতের সাথে লড়াই করেন আজহার আলী। ২০০৬ সালের ১৭ই মার্চ দিনগত রাতে মারা যান তিনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা ছিল আজহার আলী মেম্বারের। অথচ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতাও খোঁজ রাখেন না আজহার আলীর পরিবারের সদস্যদের।

আজাহার আলীর একমাত্র পুত্র হিটলার আলী বলেন, আমার বট বৃক্ষের ছায়া, আমার ছাতা, আমার ঢাল, আমার প্রিয় বাবা আমাদের ছেড়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমাদেরকে ফেলে চলে গেছেন। ২০০৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি দিন অনুভব করেছি বাবার প্রয়োজন। কতো রাত, কতো দিন নিরবে কেঁদেছি এই ভেবে যে, আজ যদি আমার বাবা থাকতো? বাবা শুধু প্রিয়জন নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজন। যে কষ্টের আগুনে আমি জ্বলেছি। যে ইতিহাসের বোঝা বয়ে নিয়ে ঘুরছি সে পরিনতি যেন পৃথিবীর আর কোন সন্তানের না হয়। তারপরও আমার বাবা ন্যায়ের পথে সত্যের পথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে শহীদ হয়েছেন। এটাই আমার গর্ব। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসি করেন।

রাজশাহী-৫ আসনের সাংসদ প্রফেসর ডা. মো. মনসুর রহমানের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে আজাহার আলীর পরিবারের সদস্যদের সহায়তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। এমনকি আমি নিজেও ওই পরিবারের সদস্যদের সর্বাত্মক সহায়তা করবো।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে