সংঘর্ষের ৭ দিন পর খুলেছে বিনোদপুর বাজার

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩; সময়: ১০:১৭ অপরাহ্ণ |
সংঘর্ষের ৭ দিন পর খুলেছে বিনোদপুর বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার ছয় দিন পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের অধিকাংশ দোকান খোলার পাশাপাশি সেখানে শিক্ষার্থীরাও আসতে শুরু করেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাজশাহী সিটি মেয়রের উদ্যোগে বিনোদপুর বাজার সমিতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে শুক্রবার থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অধিকাংশ দোকানপাট খুললেও কিছু ভেঙে যাওয়া দোকানপাট এখনও ঠিক করা হয়নি। এছাড়া উত্তর পাশে পুড়ে যাওয়া বেশ কিছু দোকান সেভাবেই থাকতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “গতকাল সিটি করপোরেশনের মেয়রের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বাজার সমিতির আলোচনা হয়। সেখানে সবাইকে বৈরী মনোভাব না রেখে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে চলতে বলা হয়েছে। এবং আমরা সেই চেষ্টাই করছি।”

বাসের যাত্রী একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ভাড়া ও সিটে বাস নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ১১ মার্চ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সূচনা হয়। চার ঘণ্টা থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। সেখানে পুলিশের একটিসহ মোট মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে আহত হয় দুই শতাধিক।

সরজমিনে বিকালে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে বাজারের অধিকাংশ দোকান খোলা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে পুলিশের গাড়িতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন।

সবজি বিক্রেতা মো. সানাউল্লাহ বলেন, “বাজার সমিতির সিদ্ধান্তে সকাল থেকেই দোকান খুলেছি। বেচাকেনা কম, কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

“আসলে ভাই, শিক্ষার্থীরা ছাড়া তো আমরা অচল। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বাজারের লোক কি আর শিক্ষার্থীদের মারতে যাবে? এর মধ্যে অন্য কেউ জড়িত।”

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে সানাউল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে এখনও তাদের সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।

মুদি দোকানি মো. মোবারক হোসেন জানান, সংঘর্ষের দিন থেকেই তার দোকানের জিনিসপত্র সরিয়ে রেখেছিলেন। ধীরে ধীরে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন আবার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, শিক্ষার্থীরাও আসছে। এমন সুষ্ঠু পরিবেশই তিনি চান বলে জানান।

আবার কেউ কেউ ওই পুড়ে যাওয়া দোকানেই বসেছেন। তেমনি একজন প্রদীপ চন্দ্র দাস। তিনি জুতা পালিশ ও সেলাইয়ের কাজ করেন।

পাশে থাকা পোড়া কাঠের বাক্স দেখিয়ে তিনি বলেন, “জুতো পালিশের সব কালি পুড়ে গেছে, সঙ্গে যে জুতোগুলো ঠিক করবো বলে নিয়েছিলাম সেগুলোও। সকালের দিকে মোটামুটি কাজ পেলেও বিকাল থেকে মাত্র একটা কাজ পেয়েছি।”

তার মূল ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই। তবে পরিস্থিতির কারণে এখন অনেকেই আসতে ভয় পাচ্ছেন। এ সম্পর্ক জোড়া লাগতে সময় লাগবে বলে মনে করেন প্রদীপ চন্দ্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টিকিট বিক্রেতা বলেন, “দেখতেই তো পাচ্ছেন দোকানে কিছুই নেই। সব পুড়ে গেছে। তাই একটা টেবিল নিয়ে বসে আছি। ব্যবসাটা একটু কম, কিন্ত শিগগিরই এ পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করি।

“দেখেন, ক্যাম্পাসের চেয়েও বিনোদপুর বাজারের আশপাশে মেসে শিক্ষার্থীরা বেশি থাকে। তাদের ওপরেই আমরা বেশি নির্ভরশীল। তাই যাই হোক, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের খারাপ হবে না। ওই ঝামেলাটা তো মূলত অন্য এক বাসের কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে হয়েছে, তাতে বাজারের অন্যান্যদের তো খুব বেশি সম্পৃক্ততা থাকার কথা না”, যোগ করেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে