৭ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ যেভাবে ঢাকায় ৮০ টাকা

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩; সময়: ১২:১৭ অপরাহ্ণ |
৭ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ যেভাবে ঢাকায় ৮০ টাকা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার কৃষক আজিজুল ইসলাম। উঁচু যেসব জমিতে ধান হয় না সেখানে চাষ করেন কাঁচা মরিচ। তবে সঠিক মূল্য না পাওয়ায় হতাশ। কিন্তু ঢাকায় এই মরিচ ৮০-১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়ার খবরে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন তিনি।

আজিজুল চাষ করেন আধুনিক প্রযুক্তির ১২ মাসী মরিচ। তিনি ফেব্রুয়ারির শেষদিকে বাজারে তুলেছিলেন প্রায় চার মণ মরিচ। তিনি বলেন, মরিচ বেশিদিন গাছে রাখা যায় না। পেকে যায়। আবার মরিচ তুলে যে সংরক্ষণ করে রাখব তারও উপায় নেই। তাই বাজারে যা দাম হয় সেই টাকাতেই বিক্রি করতে হয়।

তিনি বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচ নিয়ে যেতে ভ্যান ভাড়া আছে। এরপর বাজারের চাঁদা। এসবের পর পাইকাররা মরিচের কেজি বলে ছয় টাকা। এটা শুনে আমার কান্না আসার অবস্থা। এই মরিচ ফিরিয়েও নিয়ে যাওয়া যাবে না। এরপর দামাদামি করে বিক্রি করলাম সাত টাকা কেজি দরে।

সাত টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করে লাভ না লোকসান হলো? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকসান হয়নি। তবে এত পরিশ্রম করে চাষ করে অল্প কয় টাকা লাভ হয়। এভাবে চলতে থাকলে কৃষি কাজ বাদ দেওয়া লাগবে।

দেশের কোন স্থানে কত টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে? এর খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া জেলার কাহালু থানার সুমন মণ্ডল বলেন, আমার মরিচ বিক্রি করেছি এক সপ্তাহ আগে ১২ টাকা কেজি। গাইবান্ধার এক কৃষক জানান, তিনি বিক্রি করেছেন ১৩ টাকায়। তবে সব কৃষকই বলেন, একটি মরিচ গাছ থেকে তিন থেকে চারবার ফলন হওয়ায় ধানের থেকেও লাভ বেশি।

কিন্তু কৃষকের এই মরিচ ঢাকা শহরে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। আবার কোনো কোনো বাজারে তা ১২০ টাকাতেও বিক্রি হয়। কাঁঠালবাগান বাজারে এই মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ১০০ টাকা কেজি দরে। লাভলু নামে এক দোকানদার জানান, তিনি কাওরান বাজার থেকে এই মরিচ কিনেছেন ৮০ টাকা কেজি দরে।

কীভাবে এত তারতম্য হয় দামের? রংপুরের এক আড়তদার বলেন, আমরা ১২ টাকা কেজি মরিচ কিনি। এরপর এখান থেকে বাছাই হয়। ১০০ কেজি মরিচ কিনলে সেখানে ১০ কেজির মতো মরিচ ফেলে দিতে হয়। এরপর ট্রাকে তুলে দিতে হয়। আমরা এই মরিচ কেজি ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন কৃষক চাইলেও ট্রাকে বা অন্য শহরে মরিচ দিতে পারবে না। এখানে সিণ্ডিকেট আছে।

এই মরিচ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই মরিচ ট্রাক থেকে নিজ গুদামে নেন। জানতে চাইলে কাওসার হোসেন নামে একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ট্রাকের ভাড়া আগের থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তেলের দাম বাড়তি, আবার রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা। রাজশাহী থেকে এক ট্রাক কাঁচামাল ঢাকায় আসতে ১২-১৫ জায়গায় নামে-বেনামে চাঁদা দিতে হয়। এক কেজি মরিচে আমাদের পাঁচ টাকার মতো আরও খরচ হয়। এরপর এই মরিচ বাছাই হয়। অনেক মরিচ পচে যায়, থেঁতলে যায়।

তিনি আরও বলেন, থেঁতলানো মরিচ যায় সাধারণত হোটেলে। আর ভালো মরিচ তোলা হয় বাজারে। বিক্রির জন্য জায়গা ভাড়া, আড়ত ভাড়া, লেবার খরচ- সব মিলিয়ে আমাদের এক কেজি মরিচে আরও পাঁচ টাকা খরচ হয়। এরপর আমাদের লাভ রেখে বিক্রি করি। এরপর বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা।

এতসব কিছু হিসেব করেও মরিচের দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়। তাহলে কেন মরিচের দাম এত ঊর্ধ্বমুখী?

বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এটা একটা সিন্ডিকেট। যেটা শুরু হয় চাষির কাছ থেকেই। কারণ একজন চাষি ১০ টাকা কেজি মরিচ বিক্রি করলে এটা ঢাকায় আসার পর দাম হওয়ায় কথা ২০ টাকা। খুচরা বাজারে হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। কিন্তু মোড়ে মোড়ে সিণ্ডিকেট, চাঁদাবাজির কারণে এই দাম হয়ে যাচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। মধ্যস্বত্বভোগীরা বাড়তি এই টাকা ভরছেন পকেটে।

তিনি বলেন, কাঁচা মরিচ নিয়ে কারসাজি করাটা সহজ। কারণ কাঁচা মরিচ খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় এবং যতই দাম বাড়ুক মানুষ এটা কেনে। পিঁয়াজের দাম বাড়ার পর অনেক মানুষ পিঁয়াজ কেনে নাই। কিন্তু মরিচ এমন একটা জিনিস ১০ টাকায় এক মুঠো হলেও মরিচ পাওয়া যায়। মানুষ কেনেও বেশি। এজন্য দাম বাড়ানোও সহজ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে