রাজশাহীর পবায় ১৩ নারী কর্মকর্তা

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩; সময়: ৮:৫১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর পবায় ১৩ নারী কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্মান ও ভালবাসার মধ্যদিয়ে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের বড় অবদান হচ্ছে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষুম্য কমিয়ে আনা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ দেশ জাতির সার্বিক কল্যাণে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে চলেছে।

বর্তমানে সততা ও দক্ষতার সাথে রাজশাহীর পবা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ১৩ নারী কর্মকর্তা নিজ নিজ দপ্তর পরিচালনা করছেন। সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাঠ পর্যায়ে ইতিমধ্যেই তাঁরা নিজ নিজ দপ্তরে অবদান রেখে অর্জন করেছেন সুনাম ও খ্যাতি। পরিচয় দিয়েছেন কর্মদক্ষতার। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে তাঁরা সবাই সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। সরকারের বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তর। তাঁদের সম্মিলিত নেতৃত্বে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। সরকারি এই ১৩ জন নারী কর্মকর্তা ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে ইতিমধ্যে তাঁদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্তর জানান দিয়েছেন।

এরমধ্যে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার লসমী চাকমা : খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বাসিন্দা লসমী চাকমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন এবং ৩৩ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ২০১৪ সালে চাকুরিতে যোগদান করেন। ২০২১ সালের অক্টোবর হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পবা, রাজশাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে বাংলাদেশ সচিবালয়ের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এড়াড়াও তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, রাজশাহীতে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও কাজ করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লসমী চাকমা বলেন, সুখি-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জনগনের সেবক হিসেবে সরকারি সেবাসমুহু দ্রুত জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই কাজ করছি। এজন্য প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাবেয়া বসরী : ঢাকা সদরের উত্তরার বাসিন্দা ডাঃ রাবেয়া বসরী। শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে বিসিএস (স্বাস্থ্য) এ উত্তীর্ণ হন। ২০১০ সালে পঞ্চগড় জেলার দেবিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। এরপর নেত্রকোনা হাসপাতাল ও পরে মুগদা ৫০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন, বর্তমানে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ডাঃ রাবেয়া বসরী বলেন, ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও ৪৫/৫০ জন রোগী সবসময় থাকে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ২:৩০ টা পর্যন্ত আউটডোরে সেবা নিতে আসে ৬/৭ শত জন রোগী। করোনা কালীন সময়ে জরুরী বিভাগে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্টাফদের সমন্বয়ে কাজ করেছি। সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জনগণের দোরগড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এবং সেবার মান আরোও উন্নত করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সিভিল সার্জন, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভুঁইয়া : ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের বাসিন্দা শামসুন নাহার ভুঁইয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। কৃষিতে ২৯ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে এবং পদোন্নতি পেয়ে ২০১৬ সালে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে পবা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শামসুন্নাহার : রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাসিন্দা শামসুন্নাহার। রাজশাহী কলেজ ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকতা হিসেবে বাঘা উপজেলায় যোগদান করেন। বর্তমানে পবা উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ্ সুলতানা : সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের মেয়ে এবং বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা শিমুল বিল্লাহ্ সুলতানা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ও এম এড সম্পন্ন করেন। ২০০১ সালে নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ- শিবগঞ্জ, পাবনা-সাঁথিয়া, নাটোর- সিংড়া উপজেলা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট এবং বর্তমানে পবা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন।
শিমুল বিল্লাহ্ সুলতানা বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখনো অনেক নারী অবহেলিত। প্রতিটি পরিবার থেকে সহযোগিতা পেলে মেয়েরা অনেক কিছু করতে পারবে। এ কারণে নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো খুব জরুরি।’

সাবরেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা : ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার বাসিন্দা আয়েশা সিদ্দিকা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ প্যাথলজি বিভাগ থেকে এম এস সম্পন্ন করেন। ২৯ তম বিসিএস নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। ২০১২ সালে মোহনপুর উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং বর্তমানে পবা উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সততার সহিত দক্ষ নের্তৃত্বে নির্ধারিত সময়ে অফিস পরিচালনা করছেন। সুদক্ষভাবে পরিচালনা করছেন। আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আমি কাজ করতে ভালোবাসি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং উন্নয়নের সামিল হতে বদ্ধ পরিকর ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরিন মাহবুবা : রাজশাহী সদর বোয়ালিয়ার বাসিন্দা শিরিন মাহবুবা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৯৪ সালে মোহনপুর উপজেলায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর সিরাজগঞ্জ সদর, রাজশাহীর দুর্গাপুর, চারঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলায় এবং বর্তমানে পবা উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। ইন্সট্রাক্টর-উপজেলা রিসোর্স সেন্টার মোছা রেহেনা আক্তার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বাসিন্দা রেহেনা আক্তার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি স্নাতক ও প্রানীবিদ্যা বিভাগ থেকে এম.এস.সি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০০৩ সালে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার এ ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দুর্গাপুর উপজেলায় যোগদান করেন। এরপর রাজশাহীর বোয়ালিয়া, গোদাগাড়ীসহ বিভিন্ন উপজেলায় এবং বর্তমানে পবা উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন।

উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার অফিসার ইসমোতারা খাতুন : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা ইসমোতারা খাতুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ৬৩ নং লক্ষী নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এবং পরে ২০১৮ সালে নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। চাকুরী পরিবর্তন করে ২০২০ সালে বাগমারা উপজেলায় উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে পবা উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন।

উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সিনিয়র অফিসার ও শাখা ব্যবস্থাপক নুরুন নাহার : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নুরুন নাহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে শিবগঞ্জ উপজেলায় একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পে উপজেলা সমন্বয়কারী হিসেবে যোগদান করেন। পদোন্নতি হয়ে ২০১৮ সালে অফিসার সাধারণ হিসেবে মোহনপুর উপজেলায় এবং ২০২২ সালে সিনিয়র অফিসার ও শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক পবা উপজেলা শাখায় কর্মরত রয়েছেন।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ব্যবস্থাপক ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা সরকার নাইমুন নাহার : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা সরকার নাইমুন নাহার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকর্ম বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর রাজশাহীতে যোগদান করেন। এরপর চাকরি পরিবর্তন করে ২০০০ সালে বিআরসি রিক্রুটমেন্ট থেকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে অফিসার পদে পবা শাখা (নওদাপাড়া) যোগদান করেন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০১১ সালে সিনিয়র অফিসার, ২০১৫ সালে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে সেকেন্ড অফিসার এর দায়িত্বে ছিলেন এবং ২০২১ সালে ব্যবস্থাপক (ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা) হিসেবে খড়খড়ি শাখায় কর্মরত রয়েছেন।

তথ্য সেবা কর্মকর্তা জিনিয়া শারমিন : রাজশাহীর উপশহরের বাসিন্দা জিনিয়া শারমিন। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (স্নাতক) সম্পন্ন করেন। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্পে ২০১৮ সালে পবা উপজেলায় তথ্যআপা অর্থাৎ তথ্য সেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।

উপজেলা ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটেটর (ইউডিএফ) জাকিয়া সুলতানা : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা জাকিয়া সুলতানা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএসএস) সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এ ঢাকায় মনিটরিং অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৭ সালে উপজেলা গভার্নেন্স এন্ড ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (ইউজিডিপি) এ উপজেলা ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটেটর (ইউডিএফ) হিসেবে বাগাতিপাড়া ও নাটোর সদরে যোগদান করে বর্তমানে পবা ও চারঘাট উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে