বদলগাছীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে এলাকাবাসীর পথ রোধ

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩; সময়: ২:২৬ অপরাহ্ণ |
বদলগাছীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে এলাকাবাসীর পথ রোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছীতে রাস্তার মাটি কেটে বাঁশের বেড়া দিয়ে এলাবাসীর চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে রেখেছে এলাকার প্রভাবশালী এক পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে বদলগাছী উপজেলার মথরাপুর ইউপির লালুকাবাড়ী নামক গ্রামে।

রাস্তা দখল করে মাটি কেটে বাঁশের বেড়া দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে লালুকাবাড়ী গ্রমের প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি পরিবার ও পথচারীরা। বাঁশের বেড়াগুলি রাস্তা থেকে দ্রুত সরিয়ে না নিলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের সংঘর্ষ।

এলাকাবাসী জানায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুম হোসেন (৩৮) ও দুলাল হোসেনের ছেলে সানোয়ার হোসেন (৩৫ ) ঐ গ্রামের চলাচলের রাস্তায় মোজাম্মেল হকের বাড়ীর সামনে রাস্তাটির মাটি কেটে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে।

জানা গেছে, বদলগাছী উপজেলার মথরাপুর ইউনিয়নের লালুকাবাড়ী গ্রামের মোজাম্মেল হক সোনার তার পৈতৃক জায়গায় বাড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন।

কিন্তু আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুম হোসেন ও দুলাল হোসেনের ছেলে সানোয়ার হোসেন নামে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরে তাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের ধানী জমি বেদখল করে নেয়ার অপচেষ্টা করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রভাবশালী মাসুম হোসেন ও সানোয়ার হোসেন গত ৪ই মার্চ তাদের বাড়ির সাথের যাতায়াতের রাস্তাটি লোকজন নিয়ে কেটে ফেলে এবং পরদিন ৫ইমার্চ বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন।

এ সময় বাড়িতে থাকা মহিলা সহ আশেপাশের লোকজন তাদের চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিতে বাধা দিলে প্রতিপক্ষের ভাড়া করা লোকজন তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তাই ভয়ে কোনো কিছুই করতে পারেননি তারা।

পরে পুরুষ সদস্যরা বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে মাসুম হোসেন ও সানোয়ার হোসেন লোকজনসহ তাদের পথ রোধ করে ভয়ভীতি দেখান। এ বিষয়টি তারা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইউপি সদস্যকে অবগত করেন। তারা বিষয়টি মীমাংসার জন্য গেলে রাস্তার জমির জন্য তারা মাঠের সম্পন্ন জমি চান। না হলে সমাধান হবে না বলে মেম্বার জানান।

পরে বাধ্য হয়ে মোজাম্মেল হক সোনার বাদী হয়ে আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুম হোসেনও দুলাল হোসেনের ছেলে সানোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করে থানা অফিসার ইনচার্জ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

জানতে চাইলে বাঁশের বেড়া দেওয়া জমি তাদের দাবি করে মাসুম হোসেন বলেন কাগজমূলে তারা জমির মালিক। রাস্তাটি তাদের পৈতৃক জমি। সে জমি দখল করা হয়েছে। মোজাম্মেলকে এতদিন ধরে আমাদের জমির উপর রাস্তা করে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিলো। এখন আর ঐ জমির উপর দিয়ে কাউকে রাস্তা দিবোনা। তাই রাস্তার মাটি কেটে বেড়া দিয়েছি।

রকেট নামে ব্যক্তি বলেন, বিগত চেয়ারম্যানের আমলে এই রাস্তায় মাটি কাটাও হয়েছে। প্রায় ৪৫ বছর ধরে গ্রামবাসীসহ আশেপাশে জনসাধারণের চলাচলের জন্য এই রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছে। হঠাৎ গত ৫ই মার্চ জমির মালিক জোর করে রাস্তার মাটি কেটে ফেলেন। এই বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান জানে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রায় ৪০/৪৫ বছর ধরে আমরা এলাকার লোকজন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। হঠাৎ দেখি সামছুল হক রাস্তার মাঝে বেড়া দিয়ে চলাচলের বাধা দিচ্ছেন এবং রাস্তার মাটি লোকজন দিয়ে কেটে ফেলেছেন। রাস্তার মাটি কাটার সময় ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার লিটন উপস্থিত ছিলেন। রাস্তার জমির মালিক নাকি তারা। মাসুম হোসেন ও সানোয়ার হোসেন পরিকল্পিত ভাবে এই অশান্তি সৃষ্টি করেছেন।

ভুক্তভোগীরা গ্রামের অসহায় মানুষ। তাই তার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ ব্যপারে মোজাম্মেল হক বলেন, রাস্তা কাটার সময় স্থানীয় ইউপি মেম্বার উপস্থিত ছিলেন। আমিন নিয়ে এসে রাস্তা কেটে রাস্তার উপর বেড়া দেন মাসুম ও সানোয়ার।

মথরাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ২৯ শতাংশ জমি নিয়ে দন্দ এর মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরাতে ১২ শতাংশ জমি ছার দিওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম দুই পক্ষ সেটি মেনে চলে যায়। পরে মোজাম্মেল পক্ষ না মানার কারনেই মাসুদ ও সানোয়ার পক্ষ তাদের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। পরে মেম্বারের মাধ্যমে এটি নিরসনের চেষ্টা করে ও পারিনি।

স্থানীয় মেম্বার আহসান হাবিব লিটন এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি পরে ফোনে বিস্তারিত জানাব ভাই’ বলে কেটে দেন।

বদলগাছী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, রাস্তায় বেড়া দিয়ে চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। এসআইকে পরিদর্শন সহ এলাকাবাসীর চলাচলের রাস্তার ব্যাবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।

এ বিষয়ে বদলগাছী নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, এ ব্যপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অতি শীঘ্রই এর সমাধান করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে