রাজশাহীতে ধর্ষণ মামলা তদন্তে গাফিলতি করায় ২ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩; সময়: ৯:০৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে ধর্ষণ মামলা তদন্তে গাফিলতি করায় ২ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় একটি শিশুকে ধর্ষণ মামলার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আইন অনুযায়ী, মামলা হওয়ার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশের প্রতিবেদন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। অথচ ৮৯ দিন পার হয়ে গেলেও এ মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান এ আদেশ দিয়েছেন। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন উপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সোহেল রানা। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ওই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি রাজশাহীর তানোর থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পরে মামলার তদন্তভার পড়ে এসআই সোহেল রানার ওপর। তিনি পুঠিয়া থানাতেই আছেন। সোহেল রানাকে বাদ দিয়ে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার তদন্তের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর ধর্ষণের শিকার হয় ছয় বছরের এক মেয়েশিশু। ওই শিশুর চাচাতো ভাইয়ের (১৭) বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ১ নভেম্বর ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এরপর ওই কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে আদালত তাকে যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান। ওই কিশোর এখন সেখানেই আছে।

আজ কিশোরের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলা হওয়ার পরে ৮৯ কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত। আইন অনুযায়ী, ঘটনার সময় কেউ হাতেনাতে ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবস এবং হাতেনাতে ধরা না পড়লে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া বাধ্যবাধকতামূলক। আদালতের আদেশে বলা হয়, মামলার পর চার মাস সাত দিন চলে গেলেও ভুক্তভোগী শিশুর জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি চিকিৎসা সনদ।

নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা আদালতে হাজির হয়ে বলেন, গতকাল সোমবার ভুক্তভোগীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এখনো চিকিৎসা সনদ নেওয়া হয়নি।

আদেশে আদালত বলেছেন, কেন পুলিশ প্রতিবেদন আসেনি, সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়নি। ফলে মামলার বিচারকার্যে অযথা বিলম্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই দুজন তদন্ত কর্মকর্তা ৮৯ কার্যদিবসেও মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করেননি মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারকার্যে বিঘ্ন সৃষ্টির শামিল।

তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দুজন তদন্ত কর্মকর্তা দায়ী বলে আদালত মনে করেন। এটি তাঁদের অদক্ষতা ও অসদাচরণ বলে বিবেচিত। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি তদারকি করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার আমলি আদালতকে।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। প্রথমজনের তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে সময় লাগে। সে কারণে হয়তো পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া যায়নি। আর প্রতিবেদন না পেয়ে আদালতের দেওয়া আদেশের বিষয়টি তিনি এখনো জানেন না। আদেশের কপি থানায় এলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে