মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩; সময়: ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ |
মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ২ হাজার বসতির ১২ হাজার লোক খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। নেই বিশুদ্ধ পানি, নেই পর্যাপ্ত খাদ্য। আর তীব্র গরমের মাঝে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বসতিহারা এসব রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-১১ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

তবে এরই মধ্যে পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলো পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আর দ্রুত মাথা গোঁজার ঠাঁইসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

সোমবার (৬ মার্চ) সকালেদেখা যায়, যতদূর চোখ যায়, শুধু ধ্বংসস্তূপ। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয় শিবিরের ২ হাজার বসতি। পুড়ে যাওয়া বসতিতে ফিরছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। কিন্তু নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তীব্র গরমে খোলা আকাশের নিচে সাহায্যের অপেক্ষায় ক্ষতিগ্রস্তরা।

ক্যাম্প-১১ ডি ব্লকের রোহিঙ্গা নারী আশেয়া খাতুন জানান, ধ্বংসস্তূপের পাশে পাহাড়ি ঢালুতে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সকালে আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপে বসে নিজের ঘরের চিহ্ন বের করার চেষ্টা করছেন। তবে তখনও পর্যন্ত কোন ধরনের সহায়তা পাননি।

খতিয়া বেগম বলেন, ঘটনার পর থেকে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুখে কিছু দিতে পারিনি। নগদ টাকাগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। সন্তানদের নিয়ে কষ্টে আছি।

দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক রোহিঙ্গা সবকিছু হারিয়ে এখন ধারদেনা করে কিনছেন বাঁশ ও কাঠ। এসব দিয়ে তীব্র গরম থেকে পরিবারকে বাঁচাতে চলছে অস্থায়ী আবাস তৈরির চেষ্টা। সোমবার বেলা ১২টায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিষ্কারে নেমেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাস উপযোগী করে তোলা হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

কেয়ার বাংলাদেশ-এর টিম লিডার মো. ইলিয়াছ সুজন বলেন, কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত ক্যাম্পের বসতিগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। এসব পরিষ্কারের পর দ্রুত সময়ে মধ্যে রোহিঙ্গাদের বসতির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা বলেন, সোমবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে সহযোগিতা করা শুরু করেছে। বাঁশ-তাঁবু দিয়ে রোহিঙ্গাদের বসতি তৈরি করা হচ্ছে। জাতিসংঘ সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ বা হতাহতের কোনো ঘটনা নেই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে পাঁচটি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে, যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথ কর্মী কাজ করছেন।

জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই হাজারের বেশি ঘর (শেল্টার) পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। ক্যাম্প-১১ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা থাকেন ৩২ হাজার ২শ। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লার্নিং সেন্টার, ত্রাণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার বিকেল ৩টায় বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু হয়, আর আহত হয় ৫ শতাধিক। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে