রাজশাহীতে সরকারি কলেজের বেসরকারী কর্মচারীদের মানববন্ধন

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩; সময়: ২:৩৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে সরকারি কলেজের বেসরকারী কর্মচারীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি কলেজে কর্মরত বেসরকারী কর্মচারীদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে রাজশাহীতে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সরকারী কলেজের কর্মচারি ইউনিয়নের ব্যানারে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন করা হয়।

রাজশাহী কলেজ থেকে মৌন মিছিল বের করে সরকারি কলেজে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর বেসরকারী কর্মচারীরা। পরে তার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে কর্মচারিরা জানান, বাংলাদেশের প্রায় ৪০০টি সরকারী কলেজ ও ৩টি সরকারি মাদ্রাসার বেসরকারি কর্মচারীরা বিগত ৫ থেকে ২৫ বছরের অধিক সময় ধরে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন। আমাদের মাসিক বেতন ৫০০০ থেকে ৯০০০ টাকা। এই অল্প বেতনে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করে। অবিলম্বে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি জানান তারা।

সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা পরিচালনাকারী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে জনবল নিয়োগ দেয়। কিন্তু বেসরকারি কর্মচারীদের কোন অগ্রাধিকার দেয়নি। মাউশি কর্তৃপক্ষ আবারও ২০২০ সালে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রিট মামলার নির্দেশনা মোতাবেক অগ্রাধিকার থাকলেও মাউশি কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশ মানেন নি।

সরকারি কলেজগুলো মাত্র ৫% লোক সরকারিভাবে কর্মরত আছে। বাকি ৯৫% কর্মচারী বেসরকারিভাবে কর্মরত আছে। কোন কলেজ ও মাদ্রাসা কর্মচারীর অভাবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়নি। এমনকি করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বেসরকারি কর্মচারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ না করে প্রতিষ্ঠান। দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।

করোনা মহামারির জন্য অনেক কলেজের কর্মচারীদের মাসিক বেতন ভাতা অর্ধেক করে দেয়া হয়েছিল। বেতন অর্ধেক করার কারণে করোনা মহামারির সময় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করেছি এবং অনেকের চাকুরীও চলে গেছে। অনেকে মৃত্যু বরণও করেছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে সাফল্য অর্জন করেছে এই অর্জনে বেসরকারি কর্মচারীদের অবদানের কথা বাদ দিয়ে ভাবা যায় না। আমরা চাকরি স্থায়ী করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ৮ নভেম্বর থেকে ২৬ শে নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাংলাদেশের সরকারি কলেজ ও ৩টি মাদ্রাসায় কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করি।

প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও মহাপরিচালককে আমরা স্মারকলিপি প্রদান করি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে। মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ৩ মাসের জন্য আমাদের কর্মসুচী স্থগিত ঘোষণা করি।

বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে আমাদের এই সামান্য বেতনে পরিবারসহ জীবন যাপন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা আজ বাধ্য হয়েছি রাস্তায় নামতে। সেকারণে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন আপনার সুদৃষ্টি ছাড়া আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসবে না। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে বহিষ্কার হয়েছে। আর পরও মহান নেতা মাথানত করেননি। ভাই আপনি তাঁর সুযোগ্য কণ্যা হিসেবে আপনার নিকট আমাদের চাওয়া পাওয়া অনেক বেশি।

আমরা ১৫ থেকে ২৫ বছরের উর্ধ্বে নিজের সন্তানের মতো আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে নিজের বুকে ধারণ করে নিরসলভাবে কান্না করে চলেছি এরপরও আমাদের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগের দ্বারা আমাদের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ধাবিত হচ্ছে। সে কারণে আমরা চাই নতুন করে জনবল নিয়োগ না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ যে সকল কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে বেসরকারিভাবে সেবা দিয়ে আসছে তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিকে নিয়োগ দিয়ে সাধারণ কর্মচারীদের বেচে থাকার পথকে সুগম করার জন্য বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছি।

তারা দুই দফা দাবি তুলে ধরেন। এরমধ্যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেসরকারি কর্মচারীদেরকে নিয়োগের তারিখ হতে চাকরি সরকারি করণ ও চাকরি সরকারিকরণের পূর্ব পর্যন্ত সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতনভাতাদি প্রদান করার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে সরকারী কলেজের কর্মচারি ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে