‘১৭ বছর সংগ্রাম করে ন্যায়বিচার পেয়েছি’

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩; সময়: ১১:১২ অপরাহ্ণ |
‘১৭ বছর সংগ্রাম করে ন্যায়বিচার পেয়েছি’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ। একই সঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আপিল বিভাগের আদেশের পর সুলতানা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৭ বছর ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারিনি। অনেক যন্ত্রণা নিয়ে জীবন পার করছি। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আসামিদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য আজকের দিন ঠিক করে আদেশ দেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় সেটি নিয়ে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর এবং যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবদুস সালাম পৃথক আবেদন করেন। চেম্বার আদালত হয়ে রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে ওঠে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আজ আদেশ দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ ও মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে মহিউদ্দিনের পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান, জাহাঙ্গীরের পক্ষে আইনজীবী এস এন গোস্বামী ও সালামের পক্ষে নিখিল কুমার সাহা শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম. সাইফুল আলম।

পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, তিন দণ্ডিতের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যাবজ্জীবন দণ্ডিত আবদুস সালাম তার সাজার বাকি মেয়াদ কারাভোগ করবেন। অপর দুজনের দণ্ড কার্যকর হতে বাধা নেই। তবে সর্বশেষ ধাপে এখন আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন। এরপর কারাবিধি অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। সাধারণত রায়ের অনুলিপি পৌঁছানোর ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে এটি কার্যকর করার বিধান রয়েছে।

সাক্ষী ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, এটি স্পষ্ট মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিভাগের অধ্যাপক হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। মহিউদ্দিন উচ্চশিক্ষিত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।

অধ্যাপক তাহের জীবিত থাকলে এই পদে মহিউদ্দিনের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ শূন্য- এ ধারণা থেকে শুধু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তাহেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম, আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধা, সেবা ও কম্পিউটার পেতে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যায় মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন ও সে অনুযায়ী অধ্যাপক তাহের হত্যার অপরাধ সংঘটন করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে