জরুরি বিভাগে রোগী রেখে কেক কাটতে ব্যস্ত চিকিৎসক

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩; সময়: ৩:১৮ অপরাহ্ণ |
জরুরি বিভাগে রোগী রেখে কেক কাটতে ব্যস্ত চিকিৎসক

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা কেন্দ্র করে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (০১ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর স্বজন ও কর্মরত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল হয়।

জানা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে জেলা শহরের দরগাপাড়া মহল্লার নাজমুল হুদার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগম (৫০) প্রায় ১০টি প্রেসারের ওষুধ খেয়ে গুরুতর আহত হন। এই অবস্থায় তাকে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন।

এ সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কেক কাটছিলেন।

এ নিয়ে আহত রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে ডাকতে গেলে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে রোগীর স্বজন এবং চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ সময় সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রোগীর স্বজনদের হেনস্তা ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে আহত নারী শামসুন্নাহার বেগম।

আহত নারীর স্বামী নাজমুল হুদা বলেন, আমার স্ত্রী পারিবারিক কলহের জের ধরে ১০টি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন আমরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসি। এ সময় এসে দেখি ডাক্তারের রুমে দরজা লাগিয়ে কয়েকজন ডাক্তার মিলে কেক কাটছে।

‘চিকিৎসার জন্য তাদের দরজায় নক দিলেও সাড়া না পেয়ে জোরে ধাক্কা দিলে ডা. মো. মোশফিকুর বের হয়ে এসে চিল্লাচিল্লি শুরু করে। এ সময় ডাক্তার বলে, কী হয়েছে? আপনাদের কোনো চিকিৎসা দেয়া হবে না। রোগী দেখা হবে না। এ সময় ফোন বের করে ভিডিও করতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেন ঘরে আটকে রাখতে। এমনকি পুলিশ এনে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখান ডাক্তার।’

আহত শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে শামসুল হুদা (২৪) বলেন, জরুরি বিভাগে রোগী রেখে তারা ভেতরে কেট কাটা নিয়ে ব্যস্ত। ডাক্তারকে ডাকতে গেলে সেখানে থাকা এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, আধাঘণ্টা বিরতি, এই সময়ের মধ্যে ডাক্তার রোগী দেখবে না। পরে ডাক্তার বের হয়ে আমাদের ওপরেই আজেবাজে মন্তব্য করেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ঘরের মধ্যে আটকাতে চেষ্টা করে। আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। পরে অন্যান্য চিকিৎসকদের সহযোগিতায় মায়ের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মোশফিকুর জানান, রোগী না দেখা ও স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। রোগী আসামাত্রই সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

কেক কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আনুষ্ঠানিক তেমন কোনো কিছুই নয়। ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারদের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কেক কাটা হয়, যা এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কিছুই করা হয়নি।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, কেক কাটার ঘটনার সময় সেবা নিতে আসা ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের কথাকাটাকাটি হয়। এটি বড় তেমন কিছু নয়। পরে উভয়পক্ষকে ডেকে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা হয়েছে। এ ছাড়া রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে