হজযাত্রী পাচ্ছে না এজেন্সিগুলো

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩; সময়: ৬:৪৬ অপরাহ্ণ |
হজযাত্রী পাচ্ছে না এজেন্সিগুলো

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা ছিল।

হজে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করে গত বছর থেকে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন প্রায় আড়াই লাখ হজ গমনেচ্ছু মুসল্লি। তবে বর্তমানে হজযাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাক-নিবন্ধন করেও নিবন্ধনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক হিসেবে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন।

এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন আট হাজার ৩৯১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন।

তবে ২০২৩ সালে যখন তাদের চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে, তারা নিবন্ধন করছেন না। সর্বশেষ ১ মার্চ তারিখের হিসাব অনুযায়ী, হজে যেতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করেছেন ৩৫ হাজার ৫৩৫ জন (সরকারিভাবে ৭ হাজার ৫৫৫ ও বেসরকারিভাবে ২৭ হাজার ৯৮০)। অর্থাৎ এক লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রীর কোটা পূরণ করতে প্রয়োজন আরও ৯১ হাজার হজযাত্রী।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী, হজের নিবন্ধনের শেষ তারিখ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল। তবে প্রথম দফায় এই মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় এই মেয়াদ বাড়িয়ে ৭ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এই সাতদিনে আর ৯১ হাজার নিবন্ধন হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় হজ এজেন্সিগুলো।

২০২৩ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

আল ইহসান ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এনায়েত মিয়া বলেন, প্রতিবছর এই সময়টাতে (রমজান মাসের আগ মুহূর্তে) এজেন্সিগুলোতে হজযাত্রীদের আসা-যাওয়ার লেগেই থাকে।

এসময় আমরাও প্রচুর ব্যস্ত থাকি। প্রাক-নিবন্ধন করাদের অধিকাংশই এই সময়টাতে হজে যাওয়ার জন্য নানাভাবে তদবির করে থাকেন।

তবে এবছর তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। বরং যারা প্রাক-নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন, তারাই ওমরাহ করতে সৌদি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলছেন।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে হজের খরচ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো ছিল। গতবছর করোনার কারণে নানা ধরনের বিধিনিষেধ ছিল। তাই খরচ অনেক বাড়তি ছিল।

সবাই ভেবেছিলেন এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খরচ কিছুটা কমবে। কিন্তু নানা খাতে খরচ বেড়ে প্রায় সাত লাখ হওয়ায় তাদের অনেকেই হজে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। তারা এখন ওমরা পালনে সৌদি যাওয়ার ইচ্ছা জানাচ্ছেন।

এদিকে সঙ্গে আলাপকালে এক হজযাত্রী বলেন, এ বছরের হজযাত্রার নির্ধারিত খরচ প্রায় সাত লাখ টাকা। সৌদি আরবে গিয়ে কোরবানি দিতে হবে, খাবার ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলে আট থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ হবে।

এছাড়াও দেশ থেকেও অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হয়। সবমিলিয়ে এবার হজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। আমরা পরিবারের তিনজন হজ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

তবে এবার হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। আমার মতো বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন প্রাক-নিবন্ধন করার পরেও হজে যাচ্ছেন না।

আল রাইয়ান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সোহানুর রহমান সাঈদী বলেন, আমরা মূলত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার হজযাত্রী নিয়ে প্রতিবার হজ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করি।

গতবছর আমরা ১৩০ জনকে নিয়ে হজে গিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে অধিকাংশই অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও কৃষক-দিনমজুরের মতো খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা প্রায়ই শুনেছি ওইদিকের লোকজন জমি-জমা বিক্রি করে হজ করতে যান।

তিনি বলেন, এবার প্রাক-নিবন্ধন করা অনেকেই বলেছেন যে তারা অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তারা এমনও বলছেন যে জমি-জমা বিক্রির পরও এবার হজের টাকা জোগাড় হচ্ছে না।

প্রাক-নিবন্ধন করা অধিকাংশই হজে যেতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। যদি কোটা পূরণ করা সম্ভব না হয় তবে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। সারাবছর আমরা হজের অপেক্ষাই করি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, হজের খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডলারের দাম বৃদ্ধি ও বিমান বাংলাদেশের অতিরিক্ত বিমান ভাড়া।

এবারের হজে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আরও বেশি ভাড়া নিতে চেয়েছিল। হাবের পক্ষ থেকে আমরা দরকষাকষি করে ভাড়া কমিয়ে এনেছি (১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা), যদিও এই কম ভাড়াও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে এখনো কোটা পূরণে অনেক নিবন্ধন বাকি রয়েছে, তবে আগেও আমরা দেখেছি নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এবারও হয়তো নিবন্ধনের সময় আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে, পুরো রমজান মাসতো বাকি রয়েছে। আমার বিশ্বাস সব কোটা পূরণ হয়ে যাবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে