আন্দোলনে বন্ধ রাজশাহী রেশম কারখানা, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩; সময়: ১:৩২ অপরাহ্ণ |
আন্দোলনে বন্ধ রাজশাহী রেশম কারখানা, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৬ মাস থেকে রাজশাহী রেশম কারখানার শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে অত্যান্ত মানবেতর জীযন-যাপন করছেন শ্রমিকরা। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম, পরিবারের সদস্যদের অসুখ-বিসুখের ফলে ওষধ কিনতে না পারা, ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে ভর্তি করাতে না পারাসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বাধ্য হয়ে বকেয়া বেতনের দ্রুত পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে শ্রমিকরা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে রাজশাহী রেশম কারখানার প্রধান ফটকের সামনে নারী-পুুরুষ শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করলেও এখনো টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

শ্রমিকদের হুশিয়ারী, আমাদের বেতন দেওয়ার মনোভাব এখনো দেখিনি। কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউই আমাদের সাথে কথা বলেনি। বেতন দেওয়ার কোন আশ্বাস না পেলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের হুমিয়ারী দেন শ্রমিকরা।

তাদের মূল দাবি ছয় মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা হলে তারা কাজে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে অচল হয়ে পড়েছে কারখানাটি।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে আবারও শুরু করে কারখানার শ্রমিকরা। এই সময় শ্রমিকরা জানান, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। দৈনিক মজুরী ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছিলো। তবে সেটাও করেনি বরং আমাদের গত ৬ মাসের পুরো বেতন আটকিয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের সংসার চলছে না। অর্ধহারে অনাহারে দিন চলছে।

কারখানার এক বিধবা নারী শ্রমিক অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, আমি অসহায় এক বিধবা নারী, আমার মাথার উপর কেউ নাই। এখানে ইনকাম করে খায়। আমার মেয়েকে এখনো কলেজে ভর্তি করিনি। ঘরভাড়াসহ খাওয়া দাওয়ায় চরম অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের ৬ মাসের বেতন দেওয়া হোক। আমরা মেয়ে মানুষ হয়ে গত এক সপ্তাহ থেকে মেইন রাস্তায় আছি। মেয়ে বলে লজ্জা জনক হলেও বাধ্য হয়ে আমরা এই আন্দোলনে নেমেছি।

শ্রমিকরা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছি। এখন পর্যন্ত কেউ কথা বলতে আসেনি। আমাদের সংসার আর চলছে না। আমরা দ্রুত এই বেতন পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।

নারী শ্রমিক লুতফা জানান, আমাদের হাজিরা খাতায় হাজিরা করতে দেওয়া হয়নি। সেই খাতাও কেড়ে নিয়েছেন তারা। আমরা কাজ বন্ধ করতে চাইনা। কাজের জন্যই আমরা এখানে এসেছি। আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে আছে তাকে ফেলে বাধ্য হয়ে আজও এখানে এসেছি। আমাদের সাথে এসে কেউ কথা বলুক আর দ্রুত বেতনটি পরিশোধ করুন।

শ্রমিকরা আরো অভিযোগ করেন, আমরা শুনেছি আমাদের বেতন এসে বসে আছে তবে কি কারণে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না তা আমরা জানিনা।

শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজশাহী রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক (ডিডি) ও কারখানা ইনচার্জ কাজী মাসুদ রেজার কার্যালয়ে যাওয়া হলে অফিসের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার এই রেশম কারখানা বন্ধ করে দেয়। তখন এই কারখানার ঋণের বোঝা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বন্ধ করে দেওয়ার সময় এই কারখানায় ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করতেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে