অবৈধ দখলে নাব্যতা হারিয়ে সংকটে বড়াল নদী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩; সময়: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ |
অবৈধ দখলে নাব্যতা হারিয়ে সংকটে বড়াল নদী

নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট : অবৈধ দখল ও নদী ভরাটে নাব্যতা হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদী। বড়াল নদীর মোহনায় জমি দখল ও ভরাট করায় পাড়ের লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে উচু হয়ে যাওয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। যার ফলে নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এককালের ক্ষরস্রোত এই বড়াল নদী। তাছাড়া এই নদীটি এখন প্রায় পানি শুন্য বা মরাখালে পরিনত হয়েছে। নদী সংশ্লিষ্টদের অভিমত, জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন কাজ না করা হলে একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদীটি।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাট বড়াল নদীর ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ শেষ হয়। ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ হলেও বর্ষায় বড়ালে পানি আসেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়সারা কাজ করার কারণে নদী থেকে খনন করা বালু ও মাটি আবার নদীতে চলে গেছে। ফলে শুস্ক মৌসুমে নদীর পানি থাকে একেবারেই তলানিতে। কোন কোন জায়গায় এমনকি শুকিয়ে যেতেও দেখা যায়। পানি না থাকায় এই নদীতে আর নৌকা চলে না। পানি না থাকায় বর্তমানে এই শুকনো পুরো নদীর বুক জুড়ে চলছে বিভিন্ন ফসলের আবাদ। জেগে উঠা চরে গম, ভুট্টা, আখ, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন কৃষকরা।

বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থ বছরে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দখল আর নাব্যতা সংকটে ধুকতে থাকা বড়াল নদীটি দিন দিন সরু খালে পরিনত হতে থাকে। তাই অবৈধ দখল থেকে নদীকে রক্ষার জন্য নদীর সীমানা নির্ধারনপূর্বক খনন কাজ অতি দ্রুত শুরু করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়াল নদীটির এই রুগ্ন দশায় এই এলাকার সাধারন জনগনের জীবনমানের বিরুপ প্রভাব পড়ছে। নদী সংযুক্ত ক্যানেলগুলোতে পানি প্রবাহ না থাকায় শুস্ক মৌসুমে ভূগর্ভোস্থ পাম্প কল স্থাপন করে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে কৃষকদের। পানির লেয়ার মাটির আরও গভীরে নেমে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে আর্সেনিক রোগসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ। মিঠা পানির মাছও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পানির অভাবে। বাধ্য হয়েই জেলেরা অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে।

বড়াল নদীর এই দুর্দশার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম। ইহাছাড়াও নদীটির উৎপত্তিস্থল রাজশাহীর চারঘাটে হলেও নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বধানে হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। হারিয়ে যেতে থাকা এই নদীর প্রান ও নাব্যতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অতিবিলম্বে খননকাজ শুরু করে ও দখলমুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করার অনুরোধ জানান তিনি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নাটোর এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালিদ বিন অলীদ বলেন, পদ্মা-বড়াল নদীর মহনায় খনন করে নদীটির নাব্যতা উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে বড়াল নদী খনন অববাহিকায় পানি সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে এবং খুব দ্রুতই এর বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে