‘মানবঘাতক’ সড়ক দুর্ঘটনার ফুল স্টপ কোথায়?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩; সময়: ৪:৪২ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
‘মানবঘাতক’ সড়ক দুর্ঘটনার ফুল স্টপ কোথায়?

ফাতিন ইশরাক : সড়ক দুর্ঘটনা, কথাটির সাথে বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। কারণ এই কথাটি যে বর্তমানে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ঘর থেকে বেরোলেই সম্মুখীন হতে হয় অনিয়ন্ত্রিত এক সড়ক ব্যবস্থার। যার মধ্যে রয়েছে অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইন প্রয়োগের দুর্বলতাসহ নানা বিষয়। যার জন্য প্রায় প্রতিদিনই সড়কেই প্রাণ হারাচ্ছে হাজারো মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত ও তার সহপাঠী আহত হয়েছেন। একই দিনে বগুড়ার শাজাহানপুরে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও মা-মেয়েসহ পাঁচজন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পিকআপভ্যানের চাপায় মা-ছেলে, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মোটরসাইকেল ও মাটিকাটা মেশিনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য, মাগুরার মহম্মদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় বাইসাইকেল আরোহী স্কুলছাত্র নিহত হয়েছেন। [সূত্র : যুগান্তর অনলাইন]

এদিকে গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বাস ও মোটরবাইকের সংঘর্ষে মোটরবাইক আরোহী একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ২ জন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসা গত দুইদিনের এই কয়েকটি সংবাদেই উঠে এসেছে সড়ক দুর্ঘটনায় বিভিন্ন মর্মান্তিক মৃত্যুর চিত্র।

শুধু এই দুইদিনই নয়, এমন কোন দিন নেই, এমন কোন সময় নেই যেদিন আমাদের দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে না। বর্তমানে এই সড়ক দুর্ঘটনা ‘মানবঘাতক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

কিন্তু এই মানবঘাতক ব্যাধির ফুল স্টপ কোথায়? ফুল স্টপ তো দূরে থাক, এই মানবঘাতক ব্যাধি হিসেবে পরিচিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রতি কেউ কমা পর্যন্ত লাগাতে পারছে না। যার প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে থাকছে সড়কে ও মহাসড়কে আহতদের আর্তনাদ আর নিহতদের পরিবার পরিজনের বুকভরা কান্না।

দেশে প্রতিনিয়ত যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর প্রতিবাদে নানা আন্দোলন। কিন্তু এই প্রতিবাদের কোনো ফল কি মিলছে আদৌ? নিরাপদ সড়কের দাবিতে এত আন্দোলন, এত সুপারিশ-পরামর্শ এবং নতুন প্রবর্তিত আইন কী কাজে লাগছে?

বর্তমানে ডিজিটাল যুগে এসে সকল সমীক্ষা জনসাধারণ চাইলেই হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন এর মাধ্যমেই দেখতে পারে। ঠিক এমনই গণমাধ্যমের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারাদেশে ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের বেপরোয়া গতি। এছাড়া ভুল ওভারটেকিংয়ের কারণে ঘটে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনা। সব মিলে সড়ক দুর্ঘটনার ৯০ দশমিক ৬৯ শতাংশের জন্যই দায়ী চালক। [তথ্যসূত্র : প্রথম আলো]

তবে হিসেব অনুযায়ী কি শুধু চালকের জন্যই ঘটছে প্রতিনিয়ত এই সড়ক দুর্ঘটনা? না, শুধু চালক নয়, চালকের পাশাপাশি যানবাহন, পথচারী, আইন সবকিছুই দায়ী এই অনিয়ন্ত্রিত যান সিস্টেমের জন্য।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে এ পর্যন্ত ১১১টি সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত এর অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। যা একটি বড় ব্যর্থতা।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, বিগত ৪ বছরে ২১ হাজার ৬২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ হাজার ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন।

এই সংখ্যার হিসাবই বলে দেয়, যে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। কিন্তু এই অনিরাপদ সড়ক আর কতদিন? এভাবে মৃত্যুর মিছিল আমরা কোনমতেই চাই না। অনিয়ন্ত্রিত এই যান সিস্টেম থেকে আমাদের আবশ্যিকভাবে বেরিয়ে আসতে হবে।

সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক এবং কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, যানবাহনের সঠিক যাচাই, চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ইত্যাদিসহ স্বেচ্ছাসেবী, গণমাধ্যমের দ্বারা পথচারী ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই বদলাতে হবে আমাদের সড়ক ব্যাবস্থা। এজন্য শুধু সরকার নয়, সকলে মিলে সমন্বিত হয়েই এই অনিরাপদ সড়ককে নিরাপদ করতে হবে।

লেখক :
গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থী।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে