খাজা ইউনুস আলী ওরশ উৎসবের প্রস্তুতি ৫০ গ্রামে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩; সময়: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ |
খাজা ইউনুস আলী ওরশ উৎসবের প্রস্তুতি ৫০ গ্রামে

স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ : উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক, ওলিয়ে কামেল সিরাজগঞ্জের হযরত শাহ সুফি খাজা বাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) এর ২০২৩ সালের ১০৮ তম বাৎসরিক ওরশ শরীফ কাল মঙ্গলবার সকালে ‘আল্লাহু আকবার’ আরবি খচিত ঝান্ডা উড়িয়ে শুরু হবে।

এ ৩ দিন ব্যাপী এ ওরশ উপলক্ষে এনায়েতপুর থানার ৫০টি গ্রামে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। ধর্মীয় এ মহাসমাবেশ উপলক্ষ্য করে ৩ লক্ষাধীক মানুষের বসবাসের এ থানার প্রতিটি বাড়িতে হবে নায়রে ঝি-বেটি, দুলাভাই তথা আত্বীয়-স্বজনদের এনে শীতের পিঠা-পুলির নবান্ন উৎসব।

এ ওরশের ১০৮ তম ঐতিহ্যের মেলাকে ঘিরেও আগ্রহ যমুনা পাড়ের টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলাবাসীর। ঈদের পরেই এলাকায় স্থান পাওয়া সপ্তাহ ব্যাপী এ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চলছে তাই সবার মাঝেই উৎসাগ-উদ্দিপনা।

জানা যায়, খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) মুলত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বংশধর। ইসলামের শান্তির বাণী প্রচারের জন্য ইয়েমেন থেকে তাদের বাংলায় আগমন হয়। এরপর তিনি ভারতের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর সংস্পর্শে আসেন। শান্তি ও আদর্শের পথে ইসলাম প্রচারে ভোগ বিলাসী জীবনের বিরোধী এই মহামানব ইসলাম ও সুফীবাদের দর্শন ভারতের আসাম সহ সাড়া বাংলায় প্রচারে ২৪ লাখ মুরিদ ও খেলাফত প্রাপ্ত ৫৬ জন খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত হন। কিছুদিন অতিবাহিত হলে নিজ ভুম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শান্তির তরিকা এবং আদর্শের সুফী বাদের প্রচার।

১৯১৬ সালে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে তার পীর খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদী বাগী (রঃ) এর নির্দেশে অনুসারী নিয়ে ধর্মীয় ঝিকির-আজগার, আলোচনা, হাম্দ-নাত, গজল পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে ইসলামের আদর্শে জীবন পরিচালনার আহবানে ওরশ মোবারক শুরু হয়।

তার মানবিক কল্যানকর কাজ সবার মাঝে দৃষ্টি কারলে দেশের সর্বোত্ত ও ভারতের আসামে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হতে সম্মিলিত উদ্যোগ, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় প্রতি বছরই তার দেশ-বিদেশের অনুসারী লাখ-লাখ জাকের নারী-পুরুষ ভক্তদের অংশগ্রহন এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে বাৎসরিক ওরশের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ ধর্মীয় মহাসমাবেশ হয়ে আসছে। এবছরও ১ মার্চ ১৬ ফাল্গুন হতে ১০৮ তম এই বাৎসরিক ৩দিন ব্যাপী ওরশ ও মেলা নিয়ে জেলাবাসীর রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা।

এ উৎসবের মাত্রাকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষে খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের সয়দাবাদ মোড়, বেলকুচির চালা, এনায়েতপুর কেজির মোড়, মন্ডলপাড়া মোড়, খাজা ইউনুছ আলী কলেজ ও হাসপাতাল গেইটে সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন তোরণ স্থাপনের পাশাপাশি এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে হাসপাতাল হয়ে মাজার ও এনায়েতপুর পুরাতন বাজার হয়ে কেজির মোড় পর্যন্ত সড়ক এবং এনায়েতপুর স্পার বাধ রাস্তার উপরে বাঁশ টাঙ্গিয়ে পুরো এলাকায় লাল-সবুজ, নীল, সাদা, সোনালী সহ নানা বেরংগের বাহারী আলোকসজ্জার কাজ চলছে।

এদিকে এই ওরশ উপলক্ষে এনায়েতপুর থানার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চলছে এখন উৎসবের প্রস্তুতি। ইতি মধ্যেই সকল আত্বীয়-স্বজনদের নায়রে আনতে দাওয়াত করা হয়েছে। কেউ ওরশ শরীফের আগের দিন কেউবা আবার শুরুর দিন এলাকার স্বজনদের বাড়িতে আসবেন। মুলত এসব দাওয়াত প্রাপ্তরা সাধারনত অন্য থানা ও জেলার হয়ে থাকে।

ওরশ শরীফে মাজার জিয়ারত, ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়া সহ ঐতিহ্যের বিশাল মেলায় দলবলে কেনা-কাটা করে থাকেন। পাশাপাশি তাদের আতিথিয়তায় টানা কয়েকদিন বাড়িতে থাকে খেজুরের রসের গুড়ের পিঠা-পুলি, পায়েস সহ বাহারী খাবারের আয়োজন। এছাড়া দরবারের সুস্বাদু তবারকের স্বাদ নেয়াও এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুসজ্ঞ। ওরশ শরীফের এই আয়োজন বহুকাল ধরে দৃঢ় করে রাখছে মুসলিম-হিন্দু সকল মানুষের অনন্য সম্প্রীতির বন্ধন।

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর গ্রামের প্রবীন সমাজ-সেবক আহম্মদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সোলেমান হোসেন মাষ্টার ও খোকশাবাড়ি গ্রামের কালিপদ সরকার জানান, শত বছরের আমাদের প্রাচীন উৎসব হচ্ছে ওরশ শরীফ। যে যার যার মত পাড়ি আমরা ওরশ শরীফ সফল করতে কাজ করি। পাশাপাশি এ ধর্মীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আদিকাল হতেই আমাদের বাড়িতে দুর দুরান্তের আত্বীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রন করে থাকি।

তারা দরবার শরীফে আশা ১০/১২ লাখ মানুষের সৌহার্দ্য আলিঙ্গন করেন। পাশাপাশি নানা পসরার গ্রামীন মেলায় কেনাকাটা করে উৎসবে মাতেন। এজন্য দরবারে যেমন তাদের গরু-খাসি, মাছ, ডাল-সবজির অমৃত তবারক খাইয়ে আপ্যায়িত করা হয়। তেমনী বাড়িতেও থাকে পিঠা পুলির আয়োজন। এ এক অন্যরকম আত্তিক উৎসব। মাস খানেক আগে থেকেই ধনী-গরীব প্রতিটি মানুষ তাই প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।

এদিকে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষের আলহাজ্ব হামিদুল হক, পেশ ইমাম আলহাজ্ব মাওঃ আব্দুল আওয়াল ও মোজাদ্দেদীয়া আনসার কমান্ডার আনিসুর রহমান জানান, খাজা পীর এনায়েতপুরী (রঃ) ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে অহিংসা পরায়ন শান্তির বিশ্ব দেখতে সত্যিকারের ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন। তিনি ইসলামের আদর্শে মানবতার দর্শন নিয়ে সকলকে জীবন গড়ার পথ দেখিয়েছেন।

তাই তার ওরশ শরীফকে মহা পবিত্র উৎসব আয়োজন মনে করি আমরা। প্রতিবার এই মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে আমরা নতুন আলোর পথ খুঁজে পাই।

তারা আরো জানান, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় দেশ বিদেশের প্রায় ১০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের আগমন হবে। আগামী শুক্রবার  সকালে দরবারের গদ্দিনসীন হুজুরপাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার পরিচালনায় বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনা করে ওরশ শরীফের সমাপ্তি হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে