লাতিন আমেরিকার ফসল চিয়াসিড এখন নওগাঁয়

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩; সময়: ১:২১ অপরাহ্ণ |
লাতিন আমেরিকার ফসল চিয়াসিড এখন নওগাঁয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ : বহুগুনে গুনান্নিত লাতিন আমেরিকার ফসল চিয়াসিড।যেটিতে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এটি দেখতে তিল বা সরিষার দানার মত। এটি শরীরে কার্বো হাইইটের অন্যতম উতস।
ফ্যাটি এসিড, মিনারেলস, ভিটামিন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের উপকারী উপাদান রয়েছে যা দেহের ক্ষয়রোধে, ওজন কমানোতে এবং দেহের ঘটতি পুরনে সহায়তা করে থাকে। কৃষিবীদদের মতে, দুধের চেয়ে পাঁচগুন বেশি আয়রন এবং সামদ্রিক ছেমন মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এর পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফসল এটি।
নওগাঁয় এইবারই প্রথম চাষ হচ্ছে ফসলটি। জেলার বদলগাছি উপজেলার মাথুরাপুর ইউনিয়নের পরশরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ তার এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন চিয়াসিড।ফসল উতপাদনের ১০০ দিনের পরিকল্পনায় মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা খরচে ৭০-৮০হাজার টাকা লাভে বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
লাতিন আমেরিকা , ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উপমহাদেশে চিয়াসিড এর ব্যবহার চলে আসছে যুগের পর যুগ থেকে। এটি মুলত তেল হিসেবে রান্নার কাজে ,সালাদ হিসেবে খাবারে, বার্গারে মিশিয়ে এবং ভেষজ চিকিতসায় এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
বদলগাছি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান জানান- চিয়াসিড মুলত সালভে হিমপানিকা নামক মিউনিক প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এটিতে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট পদার্থ থাকে। যা শরীরের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
নওগাঁয় এইবারই প্রথম কৃষক আব্দুর রউফ তার এক বিঘা জমিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগিতায় এবং কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষনে চিয়াসিড চাষ করছেন।
যার উতপাদন ব্যয় ২০হাজার টাকা ধরা হয়েছে এবং এই থেকে তিনি প্রায় ২-৩ মন ফসল পাবেন বলে আশা করেছেন।
যার লাভ ধরা হয়েছে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা।চিয়াসিড থেকে তেল উতপাদনের বিষয়ে তিনি জানান- চিয়াসিড থেকে তেল উতপাদনের জন্য আলাদা এক্সট্রাক্ট্র মেশিন ব্যবহার করতে হয়।
যেমন সুর্যমুখী ফুল থেকে যেভাবে তেল নির্গমন করা জন্য আলাদা মেশিন ব্যবহার করা হয় ঠিক এটি থেকেও আলাদা মেশিনের সাহায্যে তেল উতপাদন সম্ভব। ১কেজি চিয়াসিড থেকে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ গ্রাম তেল উতপাদন সম্ভব বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
এদিকে কৃষক আব্দুর রউফ জানান- বরেন্দ্র অফিস থেকে তাকে তার জমিতে চাষ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে। এর পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সার্বিক সহোযোগিতা করে। উচ্চ ফলনশীল এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় ফসলটির দাম অনেক।
প্রথমে দুই চাষ দিয়ে মই , নিরানী, বীজ বপন, সার ফসফেট সহ তার এক বিঘা জমিতে খরচ ২০ হাজার টাকা। এই খরচ করে ৮০হাজার টাকা লাভের আশা করছেন নওগাঁর এই কৃষক।
কৃষক রউফ এর সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক এই ফসল উতপাদনে উদ্ভুদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।কৃষক লাভের আশায় মাঠে ফসল ফলায়। সামনের দিনে তারাও তাদের জমি চিয়াসিড উতপাদন করবেন। যেহেতু লাভজনক ফসল সেহেতু তারাও আগ্রহ দেখিয়েছেন চিয়াসিড চাষে।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান- প্রথমে ছোট আকারে এটি জেলার বদলগাছি উপজেলায় পরিক্ষামুলক চাষ করা হচ্ছে চিয়াসিড। উতপাদন ভালো এবং লাভজনক হওয়ায় এটি দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।

চিয়াসিড এর উপকারিতা নিয়ে পুষ্টিবিদ শায়লা সাবরিন বলেন- চিয়াসিড স্থুলতা বা ওজন কমাতে সহায়তা করে। সেই সাথে এটি সুস্থতা থাকতে সহায়তা করে। এটি কার্ডিয়াক রোগিদের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর খাবার।

এটি যেহেতু ফাইবার কন্টেন্ট করে তাই এটি রক্তের ব্যাড কলেস্টলর এলডিএল গুলো কমাতে সহায়তা করে এবং গুড কলেস্টলর এইচ ডিএল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চিয়াসিড রক্তের ভালো চর্বি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো উপাদেয় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।

চিয়াসিড প্রথম চাষ হলেও খুব লাভজনক।এটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাজারে চাহিদা বাড়লে দ্রুত উতপাদন করে লাভজনক ফসল হিসেবে দেশে পরিচিতি পাবে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্টরা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে