নড়াইলে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩; সময়: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ |
নড়াইলে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নড়াইলে আটক দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়।

নড়াইল আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার আলগীর হোসেন আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, বাস মালিক সমিতির অনুমতিক্রমে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ৩০ টাকা করে বাস প্রতি চাঁদা উত্তোলন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) শ্রমিক ইউনিয়নের কার্ডধারী খোকন বিশ্বাস ও সাকিব নামে দুই শ্রমিক শহরের নতুন টার্মিনাল এলাকায় টাকা আদায় করছিলেন।

এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল চাঁদা আদায়ের অভিযোগে তাদের আটক করে। পরে তাদের মুক্ত করতে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা রাতে বেশ কয়েক দফায় প্রশাসনের কাছে তদবির জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি।

পরবর্তীতে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন আটক শ্রমিকদের মুক্তি না দিলে ধর্মঘট চলবে।

এর প্রেক্ষিতে আজ সকাল থেকে আন্তঃজেলাসহ দূরপাল্লার কোনো পরিবহন নড়াইল থেকে ছেড়ে যায়নি এবং অন্য জেলা থেকে কোনো বাস নড়াইলে প্রবেশ করেনি।

এতে করে দূরপাল্লার যাত্রীদের পাশাপশি খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, মাগুরাসহ আশপাশের গন্তব্যে বের হওয়া যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

এতে তারা বাধ্য হয়ে ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ছুটছেন।

সন্তানদের নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে বসে থাকা দীপা রানী বলেন, ‘খুলনা যাব। বাড়ি থেকে আসছি ২ ঘণ্টা হলো। এখন শুনলাম নাকি বাস বন্ধ।

এখন বাস ছাড়া বাচ্চাকাচ্চা ও ব্যাগ নিয়ে অটোতে এত ভাড়া দিয়ে কেমনে যাব? আমাগের কষ্ট দেখার কেউ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, রাস্তায় এসে শুনি বাস বন্ধ। আমার আত্মীয় অসুস্থ হয়ে যশোর হাসপাতালে ভর্তি। তাকে দেখার মতো পাশে কেউ নেই। বউ ও বাচ্চা নিয়ে বের হয়েছি। এখন কী আর করা! বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে।

আমরা সাধারণ জনগণ বাস মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়, অপরাধ করার পর প্রশাসন গ্রেপ্তার করলে গাড়ি বন্ধ করে দেয়। যত ভোগান্তি আমাদের মতো আমজনতার।

নড়াইল জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বিপ্লব বিশ্বাস বিলো বলেন, আমরা মালিকদের অনুমতিতে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের জন্য বাস প্রতি ৩০ টাকা করে আদায় করি। এখানে বাস মালিকরা তো কোনো অভিযোগ করেনি, তাহলে কীসের ভিত্তিতে প্রশাসন শ্রমিকদের তুলে নিয়ে গেল?

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন আপনারা রাস্তায় টাকা তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিলো বলেন, আমরা তো বাড়তি কোনো টাকা নিচ্ছি না। নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আমাদের কার্ডধারী শ্রমিকরা আন্তঃজেলা রুটের বাস থেকে ৩০ টাকা করে আদায় করে।

দেশের প্রত্যেক জেলায়ই নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া আমরা তো জোর করে আদায় করছি না। বাস মালিকরা আমাদের তহবিলে দিচ্ছে।

পরিবহন ধর্মঘট সম্পর্কে তিনি বলেন, জেলায় দূরপাল্লার গাড়ি ও আন্তঃজেলার বাসগুলো মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ সিদ্ধান্তে বন্ধ করা হয়েছে।

তবে পিকনিকের বাস বা রিজার্ভ বাসগুলো আমরা চলাচলে বাধা দিচ্ছি না। আমাদের আটক শ্রমিকদের মুক্তি না দিলে আগামীকাল থেকে সব ধরনের গাড়ি চলাচল রাস্তায় বন্ধ থাকবে। এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

জেলা পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়কে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না।

এসব অন্যায় আবদার পূরণে সড়কে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। সড়কে এ ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে জেলা পুলিশ সচেষ্ট আছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে