স্কুল মাঠে জামায়াতের মাহফিল করতে না দেয়ায় প্রধান শিক্ষক জেলে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩; সময়: ৫:৪০ অপরাহ্ণ |
স্কুল মাঠে জামায়াতের মাহফিল করতে না দেয়ায় প্রধান শিক্ষক জেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ স্কুলে জামায়াতে ইসলামীর মাহফিল করতে না দেয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলার সহ-সভাপতি এনামুল হক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। সে মামলায় বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে আবু সালেহ আহমেদকে গ্রেপ্তার করে কুমারখালী থানা পুুলিশ।

গ্রেপ্তার আবু সালেহ কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে এবং কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

মামলার এজাহারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলার সহ-সভাপতি এনামুল হক দাবি করেছেন, প্রধান শিক্ষক প্রতিদিন স্কুলে অ্যাসেম্বলিতে ছাত্রীদের বোরখা পরতে বারন করেন। তিনি চুল ছেড়েদিয়ে মাথায় ক্যাপ ও পায়ে জুতা পরে সাইকেলে করে স্কুলে আসতে হবে বলে ছাত্রীদের উদ্ধুদ্ধ করেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টায় শাহানাজ খাতুন স্বপ্না, কহিনুর বেগম ও আখি খাতুন নামে তিনজন অভিভাবক স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর কথা বলেন। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য আপত্তিকর।

তবে বিদ্যালয়টির অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন ভিন্ন কথা। ওই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী তন্নি খাতুন ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী আফরোজা খানমসহ কয়েজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবেমাত্র তাদেও ক্লাশ শুরু হয়েছে। এখনও তাদের সকলের স্কুল ড্রেস বানানো হয়নি। এ কারণে প্রধান শিক্ষক অ্যাসেম্বলির সময় বলেছেন, ‘তোমরা যারা স্কুল ড্রেস তৈরী করতে পারোনি তারা দ্রুত স্কুল ড্রেস করে নাও, যারা বোরখা পরতে চাও তারা স্কুল ড্রেসের কালার ম্যাসিং বোরখা তৈরী করে নিবা, যাদের বাড়ি দুরে তারা এবং সরকারী সাইকেল যারা পেয়েছো তারা সবাই সাইকেল চড়ে স্কুলে আসবা’। শিক্ষার্থীরা বলে, ‘স্যার কোনদিনই আমাদের বোরখা পরতে নিষেধ করেনি’।

বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আখেরুজ্জামান বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারী শাহানাজ খাতুন স্বপ্না, কহিনুর বেগম ও আখি খাতুন নামে তিন মহিলা এসে বিদ্যালয়ের কিন্টারগার্ডেন শাখার শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন নিলিকে জামায়াতের সহযোগি সদস্য হওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তারা লিলিকে জামায়াতের সহযোগি সদস্যেও একটি ফরম ও প্রচারপত্রও দেন। লিলি সে সময় জামায়াতের সদস্য হতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া ওই তিন মহিলা বিদ্যালয়টিতে তাদের সংগঠনের মাহফিল আয়োজনের জন্যও চাপ দেন। এ সময় প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তিন মহিলার তর্কাতর্কি হয়।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে বিনে পয়সায় খাটার পর গত জানুয়ারীতে সর্বশেষ এমপিও ভুক্তির চুড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই এই স্কুলটিতে দখলবাজি করতে একটি চক্র নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আজগুবি ও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছে’। আমার বিশ^াস আদলত পর্যন্ত বিষয়টি যাওয়ার পর শিক্ষক আবু সালেহ ন্যায় বিচার পাবে’।

মামলার বাদি এনামুল হক জানান, তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সহ সভাপতি। মামলার এজাহারে উল্লেখিত তিন নারী এবং স্বাক্ষী হিসেবে যে ৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই তার দলীয় কর্মী সমর্থক বলে নিশ্চিত করেন। তবে ওই তিন নারী কর্মী কেন জামায়াতের সদস্য সংগ্রহ ও প্রচারপত্র বিলির কাজ করছিলেন সে প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি এনামুল হক।

গ্রেপ্তার শিক্ষক আবু সালেহর স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন লিলির অভিযোগ, ‘স্কুলটিতে জামায়াতের ঘাঁটি করতে দিইনি বলেই ওরা আমাকে শায়েস্তা করার জন্য এই মামলা দিয়েছে। ওরা এমনটি করবে তা আগে জানলে আমি এসব ঝামেলার মধ্যে যেতাম না; বরং ওদের দাবি মেনে নিতাম, তাহলে হয়ত এই হয়রানিতে পড়তাম না’। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই’।

কুমারখারী উপজেলার ০১নং কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘গতকাল বিকেলেই আমি ঘটনাটি শুনেছি। আমি নিজে সেখানে খোঁজ নিয়ে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি তা হলো- গ্রেপ্তার ওই শিক্ষকের স্ত্রী স্থানীয় কিন্ডার গার্টেন স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন লিলিকে মহিলা জামায়াতের সদস্য করার জন্য কয়েকজন মহিলা সদস্য ফরম পুরন এবং ওই স্কুলে মহিলা জামায়াতের মাহফিল করতে চাপ দেয়। ওই স্কুলে মহিলা জামায়াতের মাহফিল করতে দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা করে লিলির স্বামী শিক্ষক আবু সালেহকে মামলায় ফাঁসিয়ে শায়েস্তা করতে চেয়েছে। আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং শিক্ষক আবু সালেহর মুক্তি দাবি করছি’।

কুমারখালী থানার ওসি মোহসীন হোসাইন জানান, ‘স্কুলে শিক্ষার্থীদের বোরখা পড়তে নিষেধ করাসহ ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগে ৫৯৫ক/৫০৫ পেনাল কোড ১৮৬০র ধারায় করা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী স্কুল শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সৌপর্দ করা হয়েছে’।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে