বাঘায় কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘায় মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কৃতজ্ঞচিত্তে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ।
ব্যক্তিগতভাবে এবং দলবদ্ধ হয়ে একের পর এক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিতে উদ্ধত হয়। কিন্তু বীর বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে রাজপথ। প্রতিষ্ঠা করে মায়ের ভাষা।
সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। সবশেষে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান, উপজেলা অফিসার ক্লাব। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রভাতফেরীসহ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও দিবসটি পালন করা হয়েছে।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান, প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির পক্ষে এবং তারপর উপজেলা পরিষদ।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু, উপজেলা নির্বাহি অফিসার শারমিন আখতার শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ আওয়ামী লীগের নেতারা দলের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
তাদের পর ফুল দেন মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল আলমসহ মুক্তিযোদ্ধারা, বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেনসহ পুলিশ অফিসার , বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীসহ কাউন্সিলর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আশাদুজ্জামানের নের্তৃত্বে অন্যান্য কর্মকর্তা, জাতীয় পার্টির মইদুল ইসলাম-আব্দুর রাজ্জাক, আনসার-ডিডিপির অফিসার মিলন দাসসহ আনসারগন, বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ মিঞাসহ সাংবাদিক আখতার রহমান, লালন উদ্দীন, সাইদুল ইসলাম, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সামিউল আলম নয়ন, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মিল্টন শ্রদ্ধা জানান।
এরপর কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২, ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সংগঠনের প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান।
লাল-সাদা-হলুদ-বেগুনি কত বাহারি রঙের থোকা থোকা ফুলের স্তবকে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। পুষ্পস্তবক অর্পণশেষে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন ও শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা অধ্যক্ষ নছিম উদ্দীন, সিরাজুল ইসলাম মন্টু, ওয়াহিদ সাদিক কবীর, মাসুদ রানা তিলু, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস, মামুন হোসেন, সাবেক নেতা কামাল হোসেন, শাহিনুর রহমান পিন্টু, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন, উপজেলা প্রশাসনের কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতানসহ দপ্তর প্রধান, নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ এর ডিজিএম সুবীর কুমার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠন ।
ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শ্রেষ্ঠ সূর্যসন্তানদের কৃতজ্ঞতায়, ফুল দিয়ে স্মরণ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে। শাহদৌলা সরকারি কলেজ শহীদ মিনারে ভাষা বীরদের শ্রদ্ধা জানান তারা।
এছাড়াও উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা বীরদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। সবার মুখেই ধ্বনিত হচ্ছিল বিষাদমাখা একুশের সেই চিরচেনা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা যখন অন্যায়ভাবে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপরে চাপিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন বাঙালি ফুঁসে উঠেছিল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করে এগিয়ে যেতে থাকলে তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন।
এরপর থেকেই জাতি শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে মহান শহীদ দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।