তারা বুঝেছিল মুখের কথা কেড়ে না নিলে আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩; সময়: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ |
তারা বুঝেছিল মুখের কথা কেড়ে না নিলে আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘বিবেচনা করি বুঝিছি আমরা আবেগ দি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করিছি। যে বাংলা উন্নতি ১০ডা পৃথিবীর ১০ডা রাষ্ট্রভাষার মধ্যে একটা। সপ্তম স্থানে আছি। সে ভাষাখে আমরা খুব দূর অ্যাগা লিতে পারিনি। ব্যাকরণের ক্ষেত্রে বিভ্রাট, বানানের ক্ষেত্রে বিভ্রাট। বাংলাদেশ যে স্বাধীন হ্যাছে, অ্যার মূলে রাষ্ট্রভাষা। এখিনে বাঙালি তার সম্মান ফিরি প্যাছে।

পাকিস্তান সরকার বুঝিছিল অ্যারে মুখের কথা যদি ক্যাড়ি লিতে না পরি, ত্যাহলে এ্যারখে দ্যাবা রাখা যাবে না। এর ল্যাগি কঠোর হ্যছিল। কঠোর হ্যছিল বাংলাদেশের যে সম্পদ ছিল, যে কামাই ছিল, সেগিলি পশ্চিম পাকিস্তানে লি সেখিনকার শহরগুলি সুন্দর করবে। তারা মেলাগিলি রাজধানী বদলাছিল। রাহুল পিন্ডি, করাচি এই রকম কডা জায়গাতে রাজধানী করিছিল। বাংলাদেশের মানুষ বুঝিলিছিল। এখিন থ্যাকি বাড়াতে আন্দোলন গড়ি তুলিছিল। অ্যারা স্বাধীনতার আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত করিছিল।’

ভাষাসংগ্রামী মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী বলেন, আমরা দেশকে স্বাধীন করিছি। বুলতে হয় এই স্বাধীনতের উদ্যোগ ভাষা আন্দোলন থ্যাকি শুরু হ্যায়ছিল। সেই ভাষা আজকি হারা গ্যাছে। দেখা গ্যাছে বাংলাদেশের অলিগলিতে ইংরেজির জুয়ার। ইংরেজির জুয়ার জনগণ না, এই দেশকে লুলিপুটি খাওয়ার ল্যাগি একটি গুষ্ঠি বাংলার পিছে ল্যাগিছে। অ্যারা ইংরেজির সেবা করছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য করার ল্যাগি অ্যারা বাংলাকে দ্বিতীয়, তৃতীয় পর্যায়ে দিতে চেষ্টা করছে।

ওরা ইংরেজিকে উপরে রাখছে। এটা ঘিন্নির ব্যপার। এই ভাষাকে উন্নত করার ল্যাগি বাঙালির চেতনাকে ফিরি লি আনার ল্যাগি সরকারকে একটা নীতিমালা করতে হবে। পদক্ষেপ লিতে হবে। বাংলা ভাষাকে যারা তুচ্ছ করে অ্যারে বিচার করতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে এই রক্ত পড়া, আমারে বাংলা, যে বাংলাখে রাষ্ট্রভাষা বুলি আমি ধারণ করিছি। সেই ভাষা অন্ধকারে তলা যাবে। তাই আমারে আজকির ছ্যালি-পিলিদের কথা বুলতে হবে। আজকির ছ্যালি-পিলিকে লতুন করি বাংলার চেতনা, আত্মসম্মান বোধ ফিরা আনার সংগ্রাম করতে হবে।

ভাষাসংগ্রামী মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী বুলেন, পাকিস্তানের একটা রাষ্ট্রভাষার দরকার ছিল। এ কথাগিল্যা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থ্যাকি হছিল। অরা পাকিস্তানে উর্দুতে কথা বুলতে চ্যাহেছিল। কিন্তু উর্দুতে অরা তিন পার্সেন লোকে কথা বুলে। আর ৫৬ পার্সেন আমরা হনু বাঙালি। তারা কথা বুলে বাংলাতে। রাষ্ট্রভাষা বদলাতে হ্যালে মাতৃভাষা বাংলাখেই রাষ্ট্রভাষা কত্তে হবে। পাকিন্তানের মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় অ্যাসেছিল। ওখিনে সমাবর্তন উৎসব হছিল। উই বুলিছিল খালি উর্দুই হবে অরে রাষ্ট্রভাষা। তখন ঢাকা ইনভাসিটি, ছ্যালি-পিলি, ছ্যারেরা রাগি য্যা বুললো না না বুলবো না।

বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। খালি বাংলাখে রাষ্ট্রভাষা না করা হলে বাংলাখে অন্য কুনো রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। এলি আন্দোলন শুরু হলো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তখন প্রাদেশিক সংসদ চলছিল। সেই সংসদের মুখে মিছিল করি ছাত্ররা বাংলাখে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলে। তখন সরকার থ্যাকি ১৪৪ ধারা জারি করে। অরা ১৪৪ ধারা ভ্যাঙি মিছিল করি সংসদের দিক য্যাতে লাগে।

এই ভাষাসৈনিক বুলেন, তখনই মুসলিম লীগের বর্বর পুলিশ বাহিনী, মুসলিম লীগের গুন্ডাবাহিনী মিছিলের উপুরে ঝ্যাপি পড়ে। মিছিল থ্যাকি সবার উপুরে পুলিশ গুলি চালায়। ওই গুলিতে জব্বার, রফিক প্রমুখ শহীদ হয়। ঢাকার পিচের রাস্তা রক্তে লাল হ যাই। এ কথাগিলি তাড়াতাড়ি লোকজন শুনি ল্যা। মুসলিম লীগ সরকার নিষ্ঠুর, তারা ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালাছে। এডি অন্যয় করিছে। এর বিহিত করতে হবে। এ্যার ল্যাগি আন্দোলন শুরু হলো। অরা অনেক চক্রান্ত করিছে। অরা আরবি হরফে বাংলা লেখার চক্রান্ত মানুষকে বুঝ্যাতে পারেনি। অরে এ বাহানা ক্যান করিছির, জানা দরকার।

একটা জাতিকে দুর্বল করতে হ্যালে, একটা জাতির মেধাকে বিনষ্ট করতে হ্যালে, একটা জাতির সংস্কৃতিকে চ্যাপি র‌্যাখতে হ্যালে তারে সবগিলি শিকড়ে আছে লোকজনের কথা। এই ভাষা গিলি মায়ের ভাষা, মাতৃভাষা। অ্যার গুরুত্ব অনেক। অ্যার মর্যাদা ধরি র‌্যাখতে এ দেশের মানুষ রুখি দিছিল। শেষমেষ রাষ্ট্রভাষা বাংলা এ দেশের সরকারি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লে। ভাষা লিলেও সুমাই ৭১ বছর। এ মেলাগিলি সুমায়ে আমরা আমারে পাণের ভাষা, মায়ের ভাষাকে আমরা কত দূর উন্নতির পথে লিগিছি? সেডি বিবেচনা করি দেখা উচিত।

তিনি বুলেন, ঢাকা ইনভাসিটিকে বুলতো প্রাচ্যের অক্সপোর্ড। আর রাজশাহী সরকারি কলেজকে বুলতো নেক্সট প্রেসিডিএনসি কলেজ। এই দুই জাগায় বাংলা ভাষাখে রাষ্ট্রভাষা করার ল্যাগি আন্দোলন গড়ে উঠিছিল। এখিনে আন্দোলনে ঝ্যাপ্যা উঠিছিল রাজশাহীতে। রাজশাহীতে প্রথম মুসলিম লীগের গুন্ডা-পান্ডাদের ল্যাগা রাষ্ট্রভাষা বাংলার একজন লোকের মাথা ফাটা দিছিল। রক্ত ঝরিছিল। তখন এই রাজশাহীতে প্রথম শহীদ মিনার রচনা করিছিল। মুসলিম হোস্টেলে সারা রাত জ্যাগি, গুলি চলার খবর প্যাছিনু। আমরা সেখিনে যুদ্ধ করিছি। আমরা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করি রাখার ল্যাগি, স্মৃতিকে অমর করি রাখা য্যা এমন কী করা যায়।

প্রেসিডিএনসি কলেজ থ্যাকি আগত মেধাবী ছাত্ররা তারা রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়্যাছিল। অরা তাৎক্ষণিক বুললো এখিনে অদের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হোক। ওই স্মৃতিস্তম্ভে ল্যাখি দেওয়া হয়্যাছিল ‘ওরে ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান- ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। আমরা অনেক কষ্ট কির আশপাশ থ্যাকি ইটকিল কুড়া শহীদ মিনার করিছিনু। সকাল বেলা বাড়িতে অ্যাসিছিনু। তখন মুসলিম লীগের সেই গুন্ডাবাহিনী-পুলিশ বাহিনী সেই শহীদ মিনারটি ভ্যাঙি দিয়েছিল। রেডুয়া খবর বুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুন্যা। দেখা যায় সেখিনে বাংলা এবং ইংরেজি মিলিয়ে একটা তালগোল প্যাকা অনুষ্ঠান প্রচার করে।

তিনি আরও বুলেন, অ্যার কারণ অরা ভালো করি বাংলা জানে না, ভালো করি ইংরেজিও জানে না। তারা ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চ্যা। কিন্তু তারা বাংলাকে সেই মর্যাদা দ্যা না। সংবিধানে এর শাস্তি দেওয়ার নীতি-নিয়ম আছে। তার উপুরে কুনুদিন কুনু মানুষখে ভাষার অবজ্ঞা করার ল্যাগি, ভাষা ভুল লেখার ল্যাগি কুনু মানুষখে শাস্তি দিওয়া হয়েছে বুলি আমার জানা নেই। বছরে একবার শহীদ মিনার ঝ্যাড় দেয়।

ফেব্রুয়ারি চলি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব শেষ হয়ে যায়। আর এই চেতনা থাকে না। এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ব্যাপার। শহীদদের আত্মা কষ্ট পায়। অরা যে উপহার আমাদের দি গেছে সেডি রক্ষা যদি না করি দেশ ভুগবে, জাতি ভুগবে, তার চরম খেসারত এই জাতিকে দিতে হবে। আমি এই সরকারকে অনুরোধ জানায় তার বাপের যে ইচ্ছা ছিল বাংলাকে একটা প্রমিত আন্তর্জাতিক ভাষায় রূপান্তরিক করার। সেই আসাডা তিনি যেন পূরণ ল্যাগি সত্যিকারের কার্যকর সিদ্ধান্ত ল্যা। ওই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেদি দেশকে আগা লি য্যাছে। তার জন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

এই ভাষাসৈনিক আরও বুলেন, বাংলাতে অনেক মানসম্পন্ন লেখা বারাছে, অনেক বই বারাছে। সে বইগিলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্যাছে না অনুবাদ হছে না বুলি। বাংলা শুধু সাহিত্য, কবিতা লেখার জন্য না। বাংলাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে, প্রযুক্তিগতভাবে একটি ভাষায় রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলে বাংলা পাবে রাষ্ট্রভাষার সম্মান। এখুনো বাংলা কোনো অফিস, আদালতে ম্যালা ইংরেজি চলে।

কিন্তু অফিস, আদালতে, উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় ল্যাখা হয় না, বাংলায় জেরা করা হয় না। আমি বুলবো বাংলাকে লি একটা চরম সিদ্ধান্ত লি বাংলাকে একটা জাতির সকল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যাগ লিতে হবে। যেত সাইনবোর্ড আছে, সেখিনে ইংরেজি থ্যাক, কুনু অপত্তি নেই। কিন্তু বাংলা থ্যাকতে হবে। চারদিকে অনেক নামফলক, দোকানপাট, অফিস আছে। কিন্তু সেখিনে বাংলা নেই। ইংরেজি থ্যাকলে থাকুক, কিন্তু বাংলা থুতে হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে