বইমেলায় সারাদিন যেভাবে কাটাবেন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩; সময়: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ |
বইমেলায় সারাদিন যেভাবে কাটাবেন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা। তাই ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই আয়োজনের পসরা সাজিয়ে শুরু হয়েছে বইমেলা। পাঠক লেখকদের পদচারণায় মুখর হচ্ছে বইমেলা প্রাঙ্গণ। বইপ্রেমীদের জন্য তো বটেই আনকোরা পাঠকদের জন্যও বইমেলা একটা উৎসব।

পাঠকদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য এই মেলায় লেখকদের উপস্থিতি, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন সহ আরো নানা আয়োজন থাকে। আর বইয়ের প্রদর্শনীও হয় অন্যান্য পুস্তকবিপনি থেকে আকর্ষণীয়।

তাই বইমেলা শুরু হলেই আমার মনটা আইঢাই করতে থাকে কবে নিজের কর্ম ব্যস্ততা থেকে একটু অবসর বের করে বইমেলায় যাব। বইমেলায় গেলে এক আধঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসতে ইচ্ছেও করে না। তাই আমি চেষ্টা করি সারাটা দিন বইমেলায় কাটিয়ে আসতে।

তার জন্য একটু পরিকল্পনা করে যেতে হয়, কারণ বইমেলা বিকেলে শুরু হয়। আবার সুবিধা হচ্ছে শিশুদের জন্য মেলা সকাল থেকে খোলা থাকে। যেহেতু আমি একটু বেশি সময় বইমেলায় কাটাতে চাই তাই সাথে এক বা দুটি শিশু নিতে হবে।

আমার ভাগ্নে ইব্রাহিম বই দেখতে এবং বইমেলায় ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করে। তাই আমার সারাদিনের বইমেলা অভিযান শুরু হলো তাকে নিয়েই। আমাদের সাথে যোগ হলো আমার বন্ধু ও সহকর্মী দুজন।

আমি যাত্রাবাড়ী থেকে রিক্সা যোগে কার্জন হলের সামনে গিয়ে পৌঁছলাম। তারপর বইমেলার সামনে ফুলের মুকুট দেখে ইব্রাহিমের আবদার শুরু হলো ফুলের ক্রাউন নিয়ে দাও। দিলাম তাকে ক্রাউন কিনে।

ক্রাউন কিনে শেষ করার আগেই রং তুলি নিয়ে একজন হাজির— ‘আপু বাবুর হাতে বইমেলা লিখে দেই?’ ইব্রাহিম হাত এবার এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ফ্ল্যাগ এঁকে দাও।’ তার আবদার শেষ হলে আমরা গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম।

ইব্রাহিম বলল, ‘চল বুক স্টলে যায়ই।’ অগত্যা আমাদেরকে যেতে হলো। বইয়ের দোকানে গিয়ে তার সবই পছন্দ হয়ে যায়। এদিকে আমরা তিন জন নিজেদের জন্য কিছু বই কিনব বলে টাকা বাঁচিয়ে বাবুকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

এই ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে একটা সুবিধা হলো ইব্রাহিমকে নিয়ে ওয়াশ-রুম ঘুরিয়ে আনতে গিয়ে সব বইয়ের স্টল নম্বর আর প্রিয় লেখকের বুক স্টল কোথায় কোথায় সেটা ঘুরে দেখে এলাম। এটা আমাদের জন্য সাপে-বর হয়েছে।

কিছু সময় ঘুরে প্রচুর বই কেনার আবদার করে ইব্রাহিম একটু টায়ার্ড। এবার সে কিছু খেতে চায়। তাকে খাওয়ানো জন্য নিয়ে যাওয়া হলো বইমেলার শেষ প্রান্তে। খাবারের এক বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।

বড়দের জন্য বইমেলা খুলতে আরও কিছু সময় বাকি ছিল তাই বের হয়ে গিয়ে ইব্রাহিমকে একটু নাগরদোলায় চড়িয়ে আনলাম। তারপর আবার প্রবেশ করে বিকাশের উদ্যোগে দেওয়া বেঞ্চে বসলাম। হঠাৎ আমার মনে পড়ল বইমেলায় বিকাশে পেমেন্ট করলে ক্যাশব্যাক পাওয়া যাবে।

তাই আমাদের মধ্যে একজন গিয়ে বিকাশে টাকা দিয়ে এলো। বেশ অপেক্ষার পরে বইমেলা বড়দের জন্য খুলল। আমরা চারপাশ ঘুরে পছন্দের স্টলে গিয়ে দেখি আমার প্রিয় লেখক এসেছেন, সাথে একই প্রকাশনীতে আরেকজন লেখক এসেছেন। তাদের দুটি বই কেনা হলো। তাদের অটোগ্রাফ, সাথে ফটোগ্রাফও নেওয়া হলো।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টল খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যা নেমে এলো। ইব্রাহিম আর হাঁটতে চাচ্ছিল না। তবুও খুঁজে বের করে ছোটবেলায় পড়া কিছু রূপকথা আর কিছু কিছু বাংলা ডাবিং বই কিনলাম।

তারপর বইমেলা থেকে বের হলাম। বের হয়ে একটু চা খেয়ে বিদায় নিলাম। তবে লেখকের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ মনে রয়ে গেল। আবার একটু সময় করে যদি আরেকবার ঢু মেরে আসতে পারতাম!

প্রতিবছরই এমন মনে হয়—আরও একবার যদি যেতে পারতাম। আপনারাও এভাবে একটা দিন বইমেলায় কাটাতে পারেন। তবে আপনারা যদি সারাদিনের পরিকল্পনা নিয়ে যেতে চান তাহলে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি।

এ দিনটি সবার জন্য সারাদিন বইমেলা খোলা থাকে। শিশুদের নিয়ে গেলে সারাদিন ঘোরাঘুরি হয়, তবে আপনার ঘোরার সময় এলে তার এনার্জি মিটার ডাউন! তাই ‘যাই… যাই…’ করে একটু অস্থির করবে। বেঞ্চগুলোতে বসে একটু রেস্ট নিয়ে নিয়ে ঘুরতে পারেন।

বইমেলা আমাদের প্রাণের তৃষ্ণা মেটায়। তাই প্রতিবছর গিয়েও মনে হয় আরেক বার যদি যেতে পারতাম। এ যেন রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতো— শেষ হয়েও হইল না শেষ। পরের বছরের জন্য অপেক্ষা রেখে যায়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে