বাড়ির সীমানাপ্রাচীর জুড়ে বইয়ের দেয়াল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩; সময়: ১২:১৯ অপরাহ্ণ |
বাড়ির সীমানাপ্রাচীর জুড়ে বইয়ের দেয়াল

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাড়িতে প্রবেশের প্রধান গেটটি ঠিক বইয়ের মতো। বাড়ির নাম আনন্দধারা। প্রধান ফটকের পাশে বাড়ির সীমানাপ্রাচীরে ইটপাথরের বদলে শোভা পাচ্ছে বইয়ের মোড়ক। গেটের দুপাশের সীমানাপ্রাচীর যেন বিশাল বুকসেলফ।

সেখানে সাজানো রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি, কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা, সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলির মতো বহু পাঠকনন্দিত বই।

বইপ্রেমী প্রয়াত বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর বইপড়াকে উৎসাহ দিতে রকিব হাসান এ কাজটি করেছেন। কালজয়ী কিছু বইয়ের মোড়কে নিজের বাড়ির প্রাচীরটি দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়েছেন তরুণ বইপ্রেমী রকিব। বইকে ভালোবেসে, বইয়ের প্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়াতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নিয়েছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের কালেখাঁর ভান্ডা গ্রামের এই বাড়িটি দেখতে লোকজন ভিড় করছে সেখানে। ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে তার উদ্যোগটি।

রকিবের শিক্ষকরা এমন খবরে পেয়ে আসেন তার বাড়িতে। বাজিতপুর নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষকে বইয়ের প্রতি আসক্ত করার তার যে প্রয়াস সেটি অতুলনীয়। বর্তমান প্রজন্ম মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রে আসক্ত। তার এমন উদ্যোগে ছেলেমেয়েরা জানতে পারবে বই সম্পর্কে।

তারা বুঝতে পারবে বই মানুষকে আলোর পথ দেখায়। যারা বই পড়তে ভুলে গেছে তাদের জন্য রকিবের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। সবাইকে তার পাশে থেকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বইয়ের আদলে প্রাচীর নির্মাণের পর প্রতিদিনই সেটি দেখতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ভিড় করছেন। সরারচর শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া খানম বলে, ‘এমন ধরনের চিন্তা যিনি করছেন তাকে আমরা সবাই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটি তৈরি হওয়ার পর স্কুল শেষে যাওয়ার পথে প্রায়ই এখানে আসি।

এখানে এসে অনেক বইয়ের নাম আমরা লিখেও রেখেছি। কারণ এটা তৈরি না হলে বিখ্যাত লেখকদের এমন বই সম্পর্কে আমরা জানতে পারতাম না। শুনেছি উনি এখানে একটি লাইব্রেরিও করবেন। সেটি হলে এখানে এসে বই পড়তে পারব।’

দোতলা বাড়িটি নির্মাণের পর ২০২০ সালে বইয়ের মতো করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজে হাত দেন রকিব। প্রথমে ইটপাথর দিয়ে প্রাচীরের কাঠামো তৈরি করে তার ওপর বসানো হয় স্টিলের পাত। যেখানে বুকসেলফের মতো করে সাঁটানো হয় বিভিন্ন বইয়ের মোড়ক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামছুল হক ভূঁইয়ার ছেলে রকিব বইপাগল মানুষ। বাবার ছিল বইয়ের প্রতি দারুন অনুরাগ। ছয় ভাই-বোনের সবারই রয়েছে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। বইপড়া ও জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহ দিতেই অভিনব উদ্যোগটি নেন তিনি।

রকিব জানান, পরিবারের সবারই বইয়ের প্রতি আসক্তি রয়েছে। তার বড় ভাই একজন লেখক। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই তাদের বাড়িতে একটি লাইব্রেরি ছিল। তাই ছোট থেকেই তারা সবাই বই পড়তে খুব আগ্রহী।

তিনি জানান, বুকসেলফের মতো সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে দক্ষ কারিগর পেতে অন্তত ছয় মাস খোঁজাখুঁজি করতে হয়েছে। তাদের সঙ্গে দিনরাত লেগে থেকে অবশেষে কাঙ্খিত অবয়ব পায় দেয়ালটি।

তবে এখানে থেমে থাকতে চান না তিনি। বাড়িতে বড়সড় একটি লাইব্রেরি করবেন তিনি। যেখানে বিনা পয়সায় এলাকার তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী লোকজন বই পড়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করবেন।

৩৩টি পাঠকনন্দিত কালজয়ী বইয়ের মোড় শোভা পাচ্ছে সীমানাপ্রাচীরে। বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের লোকজন ভিড় করছেন। রেললাইনের পাশে বাড়িটির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় ট্রেনে যেতে যেতেও।

অভিনব বাড়িটি দেখে রকিবের সৃজনশীল চিন্তা ও রুচির প্রশংসা করছে সচেতন মহল। এ উদ্যোগ বইয়ের প্রতি সব শ্রেণির মানুষকে আগ্রহী করে তুলবে বলে বিশ্বাস তাদের।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে