দেশের গোয়েন্দা ডাটাবেজে অপরাধী অর্ধলাখ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩; সময়: ২:৪৮ অপরাহ্ণ |
দেশের গোয়েন্দা ডাটাবেজে অপরাধী অর্ধলাখ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চেহারা পাল্টে কিংবা যে কোনো ছদ্মবেশে পেশাদার অপরাধীরা চুরি, ডাকাতি, দসু্যতা কিংবা ছিনতাই করুক না কেন তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখতে পারবে না। সুইচ টিপলেই বের হয়ে আসবে তাদের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য।

এরই মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার অপরাধীকে ক্রিমিনাল ডাটাবেজের আওতায় আনা হয়েছে। প্রত্যেক অপরাধীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি, শরীরের বিশেষ ধরনের চিহ্ন, চোখের মণিসহ ১৫০ ধরনের তথ্যসংবলিত ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে গোয়েন্দারা।

দেশের ৬৭ কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ও ২০১১ সাল থেকে যেসব অপরাধী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের এই ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে এ ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, হাইওয়ে পুলিশ নতুন করে মহাসড়কে ডাকাত দলের সদস্যদের ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ছবিসহ তৈরি করা এ ডেটাবেজে বিভিন্ন সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং তাদের জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।

সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তর থেকে সব মেট্রোপলিটন, ৮ রেঞ্জ ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে সমন্বয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা রেঞ্জে ও হাইওয়ে পুলিশ এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা রেঞ্জে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। এরপরই খুলনা ও সিলেট রেঞ্জে অবস্থান পিছিয়ে নেই চট্টগ্রামও। পুলিশের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকা জেলার গত সাড়ে ১৩ মাসে ৪৬টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩২ জন। এদের মধ্যে ৯২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সম্প্রতি পুলিশের ক্রাইম কনফারেন্সের এ বিষয়টি আলোচনায় আসার পর ডাকাতদের ডাটাবেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই ক্রিমিনাল ডাটাবেজ থেকে জাতীয় ডাটাবেজ ও সেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অন্য যে কোনো সংস্থা সহায়তা নিতে পারবে। এতে তথ্য-পরিচয় গোপন করে কোনো সংস্থায় দাগি অপরাধীদের চাকরি নেওয়ার পথ রুদ্ধ হবে। এ ছাড়া জামিন পাওয়ার পর অপরাধীদের পরিচয় ও চেহারা পাল্টে ফের অপরাধে জড়ানোর সুযোগ থাকবে না।

এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অপরাধীদের পৃথক একটি ডাটাবেজ তৈরি করছে। এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক অপরাধীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঁচ লাখ সন্দেহভাজন অপরাধীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশের ৬৭ কারাগারে বন্দি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সব ধরনের তথ্য ডাটাবেজে সংযুক্ত করা হয়। তবে রাজনৈতিক বন্দিদের এ তালিকায় নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া অপরাধে জড়ানোর ঘটনায় বিদেশি নাগরিকদেরও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অপরাধীদের তিন পুরুষের নাম-ঠিকানা, অপরাধের ধরন, মামলার বিবরণ, শরীরের বিশেষ চিহ্নের বর্ণনা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের মণি-সংক্রান্ত তথ্য, বায়োমেট্রিক বিবরণসহ ১৫০ ধরনের তথ্য ডাটাবেজে রাখা হয়েছে। প্রত্যেক অপরাধীর নামে একটি কোড নম্বর খোলা হয়েছে। ওই কোড নম্বর চাপলেই বেরিয়ে আসবে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর সংরক্ষিত সব তথ্য।

ডাটাবেজে জঙ্গিদের ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য থাকছে। জঙ্গিদের পরস্পরের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল- এ ধরনের বিবরণও যুক্ত করা হয়েছে। একজন অপরাধী তার চেহারার বাহ্যিক অবয়ব সম্ভাব্য কী কী ধরনের করতে পারেন, এমন একাধিক ছবি ডাটাবেজে থাকছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার চিহ্নিত অপরাধীদের এ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। কোনো অপরাধী সম্পর্কে সর্বশেষ কোনো তথ্য পাওয়া গেলে, তা ডাটাবেজে যুক্ত করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সারা দেশে অন্তত পাঁচ লাখ বিভিন্ন ধরনের অপরাধী শনাক্ত করার সব ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডাটাবেজ কার্যকরের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের লুকাতে ব্যর্থ হবে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক জঙ্গি রাকিব তার চেহারা পাল্টে পালানোর চেষ্টা করে। তবে রাকিবের অবয়ব পাল্টানোর সম্ভাব্য সব ধরনের ছবি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকায় দ্রম্নত তাকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অনেক মামলার আসামিকে জামিনের পর পরবর্তী সময় অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজেও পাওয়া যায় না। তারা নাম-ঠিকানা ও পরিচয় পুরোপুরি পাল্টে ফেলে। এ ধরনের অনেক সন্ত্রাসী সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তেমন কোনো তথ্য না থাকায় অনেক সময় ক্লুহীন অপরাধের ঘটনার পর পুলিশর্-যাব কোনো কূলকিনারা করতে পারে না। ডাটাবেজ তৈরি হওয়ায় অপরাধীদের সে পথ রুদ্ধ হচ্ছে।

মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের ডাটাবেজ তৈরি প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান মলিস্নক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইওয়েতে পেশাদার ডাকাতদের একটা ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, দেশব্যাপী হাইওয়ে পুলিশের ৭৩টি থানা এবং ফাঁড়ির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তত করার করা হয়েছে। এর আগে ডাকাত দলের সদস্যদের তালিকা করে গত ১৪ আগস্টের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে। ওই নির্দেশ পাওয়ার পর তালিকা প্রস্তত করে হাইওয়ে পুলিশের সদর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।

এরই অংশ হিসেবে পলাতক ডাকাতদের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে তাদের বাড়িতেও। ইনকোয়ারি স্স্নিপের মাধ্যমে ডাকাতদের বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে তাদের ছবিও। এসব ডাকাতরা কারাগারে, না বাইরে অবস্থান করছেন তাও থাকবে ওই ডাটাবেজে।

একাধিক সূত্রমতে, বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে। কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আবার কখনো সরাসরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই থানায় মামলা করছে না। মোটা অঙ্কের টাকা বা স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনায় শুধু মামলা হচ্ছে। আর ডাকাতির শিকার বেশিরভাগই তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।

ফলে ডাকাতির প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। যার সবশেষ দৃষ্টান্ত সম্প্রতি গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহণ (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে নৃশংস ডাকাতির ঘটনা। এ ঘটনার পর আশুলিয়া থানাধীন নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করে পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। আর ভুক্তভোগীদের কয়েকজন মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, পেশাদার ডাকাতদের একটা ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় এ পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং তাদের ১৬১ ও ১৬৪ এ যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই করে ডাটাবেজ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে মহাসড়ক, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি রোধ করা অনেকটা সহজ হবে। সূত্র- যায়যায়দিন

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে