আজ শহীদ জোহা দিবস, এখনও পায়নি জাতীয়  স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩; সময়: ২:০২ অপরাহ্ণ |
আজ শহীদ জোহা দিবস, এখনও পায়নি জাতীয়  স্বীকৃতি
ইবতেসাম শান্ত, রাবি : আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি। ড. শহীদ সৈয়দ মহম্মদ শামসুজ্জোহা দিবস। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা পাক হানাদার বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে শহীদ হন। তিনিই প্রথম বাঙালি শহীদ বুদ্ধিজীবী। তাঁর আগে কোন বাঙালি বুদ্ধিজীবী এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হওয়ার উদাহরণ নেই।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু দিবসটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছেনা। শহীদ ড. শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগের ৫৪ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত এ দিবসটি শুধু এই ক্যম্পাসের মাঝে আর গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ। দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী দোলা খাতুন বলেন,
আজ ১৮ই ফেব্রুয়ারী “শহীদ জোহা দিবস”। স্যারের প্রাণোৎসর্গের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে গণআন্দোলন রুপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে। ছাত্রদের প্রতি তার ভালবাসা, দায়িত্ববোধ প্রত্যেক শিক্ষকদের জন্য আদর্শ।
তিনি আরও বলেন, দুঃখের বিষয় দিবসটি শুধু এই ক্যম্পাসের মাঝে আর গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ। দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করার দাবি জানানো হলেও তা মানা হয়নি। দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা সময়ে দাবি।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্র ও ছাত্র নেতা হিসেবে ক্ষুব্ধ। কেননা ড. জোহা স্যারের মৃত্যুর এতো বছর হয়ে গেলেও দিনটি কেবল এই ক্যাম্পাসেই পালিত হয়! জাতীয়ভাবে দিনটি এখন স্বীকৃতি পায় নি। অথচ তাঁর এই আত্মাহুতি বাঙালি জাতীয় সংগ্রামে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিল। এই ঘটনার পর গণঅভ্যুত্থান দুর্বার রূপ ধারণ করেছিল। ফলে বাধ্য হয়ে পাক শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে। বাঙালি স্বাধীনতার আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়। অথচ এই জোহা দিবস এখনো জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নূর আহসান মৃদুল বলেন, নিজের জীবনের বিনিময়ে সেদিন তিনি তার ছাত্রদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর আত্মদানের মধ্য দিয়েই তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের ভিত নড়ে গিয়েছিল। এগিয়েছিল বাঙালি জাতির জাগরণী চেতনা। যা বেগবান করেছিল দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামের গতিকে। জাতি হিসেবে আমাদের উচিত দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা ।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম আলো বন্ধুসভা প্লাকার্ড হাতে ড. জোহা দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করার দাবিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার রক্তে ভেজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন।
সেখানে শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ ১৮ই ফেব্রুয়ারী শহীদ জোহা দিবস। কিন্তু দুঃখের বিষয় দিবসটি শুধু এই ক্যম্পাসের মাঝে আর গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস করার  দাবি জানানো হলেও তা মানা হয়নি।  ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের নিকট একটি অনুপ্রেরণার নাম। ১৯৬৯-এ জোহার আত্মত্যাগ গণ-আন্দোলনকে করেছেন বেগবান। যা পরবর্তীতে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা আনতে সহযোগিতা করেছিল। জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে এই ইতিহাসটি বছরের পর বছর নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণায় পাক-বাহিনী পূর্ব-পাকিস্তানে ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে শিক্ষার্থীরা এ ধারা উপেক্ষা করে প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সংবাদে তৎকালিন প্রক্টর ড. জোহা প্রধান ফটকে ছুটে যান।
এক পর্যায়ে ড. জোহা ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে পরে রাজশাহী মিউনিসিপল অফিসে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে