আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী ওয়াহেদ গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩; সময়: ৩:০৯ অপরাহ্ণ |
খবর > জাতীয় / লিড
আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী ওয়াহেদ গ্রেপ্তার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডলকে (৭০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মুগদা থানার মাণ্ডা এলাকায় ছেলের বাসায় দেখা করতে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আত্মগোপনে থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন আব্দুল ওয়াহেদ। ছদ্মনামে তাবলিগ দলের সঙ্গে নিয়মিত স্থান পরিবর্তন করতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করতেন।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ওয়াহেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়।

১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আব্দুল ওয়াহেদ জামায়াত ইসলামীর গাইবান্ধা সদরের সদস্য সচিব ছিলেন।

তার বাবা আব্দুল জব্বারও একই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি ও সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন।

বাবার যোগসাজশে আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ভাই দুজনেই শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালান।

১৯৭১ সালের ১ জুন ওয়াহেদ তার বাবা-ভাই ও সঙ্গীসহ পাকিস্তান আর্মিকে নিয়ে গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর গণহামলা চালান। ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও অপহরণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে পরিবারগুলোকে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করে।

এ ঘটনায় ২০০৯ সালে গাইবান্ধা নিম্ন আদালতে আব্দুল ওয়াহেদসহ পাঁচজনকে আসামি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্যান্য আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকেন। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ও পরবর্তী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হলে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

পরবর্তী সময়ে তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রমানিত হয়। এতে করে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পাঁচজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আব্দুর জব্বার ও রঞ্জু মিয়া মারা যান।

আরও দুইজন আসামি জাছিজার রহমান ও মোন্তাজ আলী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তদন্তে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা সদর থানায় তাদের নৃশংসতায় প্রাণ হারান প্রায় আটজন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া গৃহহারা হয় বহুসংখ্যক হিন্দু পরিবার।

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন ও সাভার এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন।

এরপর তিনি একটি তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে থাকেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত তাবলিগ দলের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করতেন।

আত্মগোপনে থাকাকালীন ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন আব্দুল ওয়াহেদ। উত্তর মাণ্ডা এলাকায় তার ছেলে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে