বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ডিমের দাম, কারণ কী?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩; সময়: ১০:০০ পূর্বাহ্ণ |
বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ডিমের দাম, কারণ কী?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশে প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস হিসেবে ধরা হয় ডিমকে। কিন্তু গত কয়েকদিনের বাজার মূল্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে ডিম এখন আর ‘সাশ্রয়ী’ পণ্য নয়। যেখানে বাজার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষদের, সেখানে নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য ডিমের অতিরিক্ত মূল্য যেন ‘শিশুর কাঁধে হাতির পা’।

যেখানে গেল জানুয়ারি মাসে ১ ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকার আশপাশে, সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে এসে ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। যদিও গত বছরের আগস্ট মাসেও হঠাৎই বেড়েছিল পণ্যটির দাম।

সেসময় ডিমের বাজার মূল্য নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করা হবে। এরপর থেকে কিছুদিন পণ্যটির দাম কমতির দিকে থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে ডিমের বাজার মূল্যে দেখা গেছে ঊর্ধ্বগতি।

হঠাৎ করে ডিমের দাম আবার বাড়ছে কেন?

সংশ্লিষ্টদের মতে-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। আর তারই প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি খাদ্যের দামে। পোল্ট্রি খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা ও সয়ামিলসহ বিভিন্ন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। আর এই পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। পোল্ট্রি খাদ্য, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, সে কারণে ডিম ও মুরগির দামও বেড়েছে।

পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলারের দামের কারণে আমদানির খরচ বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট থাকায় এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে খাদ্য আমদানি বাজারে সরবরাহে ঘাটতিও তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এম খান বলেন, ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ খাদ্যের উপাদান আমদানি হয়। সেখানে ফরেন কারেন্সির সমস্যার কারণে এই খাতে প্রভাব পড়েছে। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যের চালান আসতে সমস্যা হচ্ছে। এটাও ফ্যাক্ট।

এম এম খান বলেন, পোল্ট্রি খাদ্যের চড়া দামের কারণে লোকসান দিয়ে ছোট অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন এখন কম। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মুরগির বাচ্চার দাম না পাওয়ায় দেশে মুরগি ও ডিমের বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, গত এক বছরে ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। সবকিছুর দাম এভাবে বাড়তে থাকলে বাকি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

এম এম খানের মতে-ডিমের দাম বাড়লেও খামারিরা এর সুফল পাচ্ছে না। কারণ বিভিন্ন জায়গায় আড়তদাররাই দাম নির্ধারণ করে দেয়। আর তাদের সেই নির্ধারিত দামের কারণের বাজারে ডিমের মূল্যে তারতম্য দেখা দেয়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম বেঁধে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ে না, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম পরিবহন খরচ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ডিমের দাম নির্ধারণ হয়। এছাড়া বাজারে ডিমের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হলেও দাম বেড়ে যায়।

বর্ধিত মূল্য কমার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, উৎপাদন খরচ কমাতে না পারলে ডিমের দাম কমবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ-

অন্যদিকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে বেড়েছে ডিমের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগের মূল্যস্ফীতির তথ্য অনুযায়ী, গের ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ৮.৫ শতাংশ। শুধু জানুয়ারি মাসেই ডিমের দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ১ শতাংশ।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে এভিয়েন ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে সেখানকার প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ পাখি মারা যায়। ফলে দেশটিতে ডিমের বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মুরগির খাদ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াও একটা কারণ।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ব্যাপকহারে। তবে দেশটির ডিমের দাম রেকর্ড হারে বেড়েছে। এছাড়া কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ডিমের দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে জাপানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার টোকিওতে ডিমের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। তবে শুধু বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাবেই যে বিশ্বজুড়ে ডিমের দাম বেড়েছে তা নয়। বিশ্লেষকদের মতে-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও এর অন্যতম কারণ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে