লাউসে বাংলাদেশিদের ‘প্রতারণামূলক’ কাজে বাধ্য করছে চীনারা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩; সময়: ১:০৭ অপরাহ্ণ |
লাউসে বাংলাদেশিদের ‘প্রতারণামূলক’ কাজে বাধ্য করছে চীনারা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাউসের গোল্ডেন ট্রাইঅ্যাঙ্গেল বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে প্রতারণা করার জন্য কল সেন্টার খুলেছে চীনা নাগরিকদের একটি চক্র।

আর এ চক্র বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা, মাদাগাস্কার এবং রুয়ান্ডার কিছু নাগরিককে উচ্চ বেতনে চাকরির নামে প্রতারণা করতে বাধ্য করছে।

শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমাধ্যম ডেইলি মিরর সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি ওই অর্থনেতিক জোনে কাজ করা শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে জানতে পারে তাদের দিয়ে কল সেন্টারের নামে প্রতারণা করানো হচ্ছে। ওই সময়ই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও অনেকটা জোর করে প্রতারণা করতে বাধ্য করা হচ্ছে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

ডেইলি মিরর জানিয়েছে, অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে গত বছর ৩ লাখ ১১ হাজার ২৬৯ শ্রীলঙ্কান দেশ ছাড়েন। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রতারিত হয়ে লাউসে যান। সেখানে গিয়ে এই প্রতারণামূলক কাজে জড়িত হতে বাধ্য হন।

গোল্ডের ট্রাইঅ্যাঙ্গেল নামের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনটি প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। এটি লাউসের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। আর এ জোনটি পরিচালনা করেন চীনের নাগরিক ঝাও উই। তার মালিকানায় রয়েছে কিংস রিসোর্ট ক্যাসিনো।

জাতিসংঘের দক্ষিণ এশিয়ার মাদক ও অপরাধবিষয়ক প্রতিনিধি সম্প্রতি লাউসের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গোল্ডেন ট্রাইঅ্যাঙ্গেল হলো অন্যতম পরিচিত কুখ্যাত অর্থনৈতিক জোন। এখানে ঝাও উই ও তার চক্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া তাদের প্রচুর অর্থও আছে।’

ডেইলি মিরর শ্রীলঙ্কার এক নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত। তার সঙ্গে আরও প্রায় ১০০ শ্রীলঙ্কান রয়েছেন। দেশে চাকরি না পাওয়ায় তারা এ কাজ করছেন। যদিও তাদের প্রথমে থাইল্যান্ডে ভালো চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লাউসে এসে তারা আটকে গেছেন। তাদের বেশিরভাগই পুরুষ।

ওই ব্যক্তি আরও জানিয়েছেন, তাদের কাজ হলো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করা। তারা লক্ষ্য করেন ৩৭ বা এ বেশি বয়সী আমেরিকানদের। মার্কিনিদের ব্যবহৃত ডেটিং অ্যাপ হিঙ্গে, বো, টিন্ডার এবং পিওএফ.কমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করার চেষ্টা করেন তারা।

তিনি আরও জানিয়েছেন, তাদের যেসব বস আছেন তাদের সবাই চীনা নাগরিক। আর তাদের চেইন অব কমান্ডের কোনো সূত্র নেই। ছোট-বড় অসংখ্য গ্রুপ হয়ে কাজ করেন তারা।

ওই শ্রীলঙ্কার নাগরিক আরও জানিয়েছেন, যাদের লাউসে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের মূলত মিথ্যা কথা বলে অন্য কোনো দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কাতেই একটি চক্র কাজ করছে। যারা সাধারণ মানুষদের ভালো চাকরি দেওয়ার নাম করে থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে অবৈধভাবে সাগরপথে লাউসে নিয়ে আসে। সেখানে গিয়ে তারা অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে যান। সেখানে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর দেওয়া হয় নতুন পরিচয়। এছাড়া প্রত্যেককে নতুন আটটি আইফোন এবং সিম দেওয়া হয়। সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ ইনস্টল করে সুন্দরী নারীদের ভুয়া ছবি দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করে মার্কিনিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে প্রতারণা করতে বলা হয়।

এছাড়া দুইজন বাংলাদশি সম্পর্কে ভয়ানক তথ্যও দিয়েছেন ওই শ্রীলঙ্কান। তিনি জানিয়েছেন, এসব প্রতারণা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এক বাংলাদেশি। এ কারণে তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। এছাড়া অপর এক বাংলাদেশি মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে অন্যরা আটকান।সূত্র-এএনআই

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে