‘অলৌকিক শিশু’ আরাস এখন কেমন আছে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩; সময়: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ |
‘অলৌকিক শিশু’ আরাস এখন কেমন আছে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : হাসপাতালটি প্রাপ্তবয়স্কদের। তাই বিছানাটা পাঁচ বছরের আরাসের জন্য বেশ বড়। সেই মস্ত বিছানায় আধশোয়া হয়ে গাড়ি নিয়ে খেলছিল আরাস। তুরস্কের ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ‘অলৌকিক শিশুদের’ একজন সে।

আরাসকে ‘অলৌকিক শিশু’ বলার কারণ হলো, ভূমিকম্পের ১০৫ ঘণ্টা পর কাহরামানমারাস শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। যখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আনা হয়, তখন তার শরীরে তাপমাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে (হাইপোথার্মিয়া) নেমে এসেছিল। তার শরীরের তাপমাত্রা সে সময় ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরাসকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে তার সাত বছরের বোন হিরানুরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ৯ বছরের ভাই আলপ, এমনকি তার বাবাকেও উদ্ধার করা যায়নি।

ভয়ংকর ভূমিকম্পে সব হারানো পরিবার অবশ্য কেবল আরাসের নয়। আরাসের মতো অনেক পরিবারই ভূমিকম্পে সব হারিয়েছে।

ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া আরাসের স্বজন তাঁর দাদা মেহমেত বিছানার পাশে বসে আরাসের ঘন চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। বললেন, ‘সে খুব ভালো ছেলে। শান্ত। দায়িত্বশীল। সে দুষ্টু নয়।’

৭২ বছরের মেহমেত বলেন, জীবনের বাকি দিনগুলো তিনি আরাসের দেখাশোনা করে কাটিয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকর্মীরা অনেক কষ্ট করে আরাসকে বাঁচিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার করুণায় উদ্ধারকারীরা আরাসকে তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

আরাসের বাঁ পায়ের ব্যান্ডেজ বদলিয়ে দিচ্ছিলেন চিকিৎসক। তিনি বলেন, সে দ্রুত সেরে উঠছে। আরাসের মাকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে আরেকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন।

শিশুরোগবিশেষজ্ঞ মেহমেত সিহান তাঁর সহকর্মীদের সহায়তা করতে ইস্তাম্বুল থেকে কাহরামানমারাসে পৌঁছেছেন। সেখানে ইসরায়েলি চিকিৎসকেরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটি স্থাপন করেছেন। সেখানেই আরাস চিকিৎসাধীন।

ওই হাসপাতালে গতকাল সোমবার হাঁটাহাঁটি করার সময় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া আরাসের সঙ্গেই কেবল দেখা হয়নি, দেখা হয়েছে ৬৫ বছরের সামিরের সঙ্গে। প্রচণ্ড শীতের ছয়টি রাত সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলেন সামির। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় তাঁকে। চিকিৎসকেরা সামিরের জীবন রক্ষা করতে পারলেও তাঁর পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে।

এ ধরনের একের পর এক রোগীর চিকিৎসা করতে করতে ক্লান্ত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসকেরা। শিশুরোগবিশেষজ্ঞ মেহমেত সিহান বলেন, ‘পরিস্থিতি খুব ভয়ংকর। অনেক শিশু তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে। আমি জানি না। পরিস্থিতি আমার জন্য খুবই কঠিন।’

চিকিৎসক ব্রায়োনি পয়েন্টন বলেছেন, তুরস্ক এবং বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক ও নার্সরা হতাহতদের যেভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তা প্রশংসনীয়। আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দল কাহরামানমারাসের বাইরেও চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

তার্কোগ্লু শহরে ব্রিটিশদের সবুজ তাঁবুগুলোর পাশে তুর্কিদের লাল ত্রিপল দেওয়া তাঁবুগুলো দেখা গেছে। সেখানে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের চিকিৎসকেরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

ব্রিটিশ চিকিৎসকেরা শহরটিতে মাঠপর্যায়ে হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। তবে ভূমিকম্পে সেগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

ভূমিকম্পে সিরিয়ায় হাসপাতালসহ হাজারো ভবন ধ্বসে পড়েছে। ইদলিব প্রদেশের বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত আজমারিন শহরে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্সের (হোয়াইট হেলমেটস) সদস্যরা

ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি যে সেবার প্রয়োজন ছিল, সে সময় পেরিয়ে গেছে। তবে শহরটির ৮০ হাজার বাসিন্দা জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত।

ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত চিকিৎসা সহায়তা দাতব্য সংস্থা ইউকে-মেডের অংশীদার হিসেবে তুরস্কে এসেছেন চিকিৎসক ব্রায়োনি পয়েন্টন। তিনি বলেন, তাঁরা তুরস্কের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তাঁদের কাজ দেখে অভিভূত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন। এখনো তাঁরা অসুস্থ। আমরা যত বেশি পারি এ ধরনের রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক ও নার্সরা তুরস্কে ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তবে কেবল শারীরিক অসুস্থতা নয়, অনেকে মানসিক অসুস্থতায়ও ভুগছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে