কোচিং শেষে মায়ের সাথে শেষ দেখা হলো না নাফিসের

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩; সময়: ৮:৩১ অপরাহ্ণ |
কোচিং শেষে মায়ের সাথে শেষ দেখা হলো না নাফিসের

এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : প্রতিদিনের মতো কোচিং শেষে মায়ের সাথে শেষ দেখা হলো না জয়পুরগাটের ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিস ফুয়াদের। জয়পুরহাটে সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ ৫ জন সিএনজি যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নাফিসও নিহত হয়। সোমবার সকালে ক্ষেতলাল উপজেলার মালিপাড়া এলাকায় জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ছেলেকে নিয়ে মা নাদিরা বেগমের অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা করে ছেলেকে অনেক বড় করে মানুষের মত মানুষ করবেন এমন স্বপ্ন ছিল তাঁর দু’চোখে। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করালেও কোচিং করানোর জন্য রাজশাহীতে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখানে দশ মাস কোচিং এর পর সংসারের অভাব অনটনের কারণে এক মাস আগে ভর্তি করান জয়পুরহাটের একটি কোচিং সেন্টারে। আর তার থাকার ব্যবস্থা করেন একটি মেসে।

সেই কোচিং সেন্টার থেকে সোমবার মা নাদিরা বেগমের সাথে দেখা করার জন্য জয়পুরহাট থেকে সিএনজি অটোরিক্সা করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ যাত্রীর সাথে নিহত হয় কলেজ শিক্ষার্থী নাফিস ফুয়াদ।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া মহল্লার মুদি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের ছেলে নাফিস ফুয়াদ। দুই ভাইবোনের মধ্যে নাফিস ছোট। বড় বোন নদী আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই নাফিস ছিল বাবা-মা’র খুব আদরের। তবে বাবার চেয়ে মা নাদিরা বেগমের সাথে নাফিসের সখ্যতা ছিল সবচেয়ে বেশি। মা’কে ছেড়ে যেন থাকতেই পারতো না নাফিস। ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নাদিরা বেগম বুকে পাথর চেপে ছেলেকে পড়ালিখার জন্য বাহিরে থাকার ব্যবস্থা করেন। ছেলেকে বাহিরে রাখলেও ফোনে যোগাযোগ ছিল সবসময়। সেই ছেলের এমন মৃত্যুর খবর কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন মা নাদিরা বেগম।

শুধু চিৎকার করে বলছেন,‘সিএনজিতে উঠেও সোনা মানিক ফোন করে জানিয়ে ছিল,‘মা আমি সিএনজিতে উঠেছি,২০ মিনিট পর ফোন দিও, তোমার সাথে কথা বলবো আমার ফোনে টাকা নেই। ২০ মিনিট পর ফোন দিলে মানিক আমার জানায়, এই রচলে এসেছি মা,আমি কলেজে যাব, তুমি কি আসবে আমার কলেজে ? আমি যেতে চাইনি বলেছিলাম, ‘বাবা তুমি কলেজ করে বাড়ি এসো। সেই বাবা আমাক ছেড়ে চলে গেল বলেই তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শ^শুরবাড়ি থেকে এসেছেন একমাত্র বড় বোন নদী আক্তার। পাশের চেয়ারে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন। আর ফিস ফিস করে বলছিলেন,‘তোর আন্ড্রয়েড ফোন আমাকে দিয়ে বাজার থেকে নতুন বাটন ফোন কেনার জন্য আজকে আসতে বলে তুই চলে গেলি ভাই। তোর এই আবদার আমি কেমনে পূরণ করবো। তোকে কেমনে ভুলে থাকবো। আল্লাহ তুমি আমাদের এ কোন শাস্তি দিলে।

বাবা রফিকুল ইসলাম স্থানীয় ভাশিলা ত্রিমোহনী বাজারে মুদি দোকান করে সংসার নির্বাহ করেন। তারও আশা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। কিন্তু সোমবারের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের সকল আশা শেষ করে দিয়েছে। সোমবার বিকেল ৫টায় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নাফিসকে কবর দেয় তার পরিবার। নাফিসের এমন অকাল মৃত্যুতে পরিবার তথা গোটা গ্রামে শোকের মাতম নেমে আসে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে