ভালোবাসার লাল গোলাপে চাষিদের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩; সময়: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ |
ভালোবাসার লাল গোলাপে চাষিদের মুখে হাসি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মাঘের শেষে রূক্ষ প্রকৃতিতে রঙ ছড়িয়ে ফুটে আছে লাল টুকটুকে গোলাপ। প্রকৃতিতে এ যেন স্রষ্টার তুলিতে আঁকা ভালোবাসার রঙ। দুদিন বাদেই ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এদিন পহেলা ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন। একই সঙ্গে সারা বিশ্বে ভালোবাসার দিবস হিসেবেও পালিত হবে এই দিনটি। আর এই খুশিতেই সাভারের গোলাপ চাষিদের মুখে ফুটেছে একগাল হাসি।

রাজধানীর নিকটবর্তী সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দেশব্যাপী খ্যাতি এখন গোলাপ চাষের জন্য। দাপ্তরিক কাগজপত্রে গোলাপ নামে কোনো গ্রাম নেই কিন্তু এখানকার সাধারণের মুখের কথায় ও দোকানের সাইনবোর্ডসহ সবখানে আছে ‘গোলাপ গ্রাম’। এই ইউনিয়নের শ্যামপুর, সাদুল্লাহপুর, মৈস্তাপাড়া, বাগ্নিবাড়ি, বাটুলিয়া ও কমলাপুর উঁচু লাল মাটির এই গ্রামগুলো একনামে পরিচিত গোলাপ গ্রাম নামে। এই গ্রামে যতদূর শুধু চোখ যায় গোলাপের বাগান। এ যেন স্বপ্নের গ্রাম। সাভারের এই গোলাপ গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত। প্রতিদিনই সদ্য ফোটা গোলাপের সৌন্দর্য ও গন্ধ নিতে চলে আসে হাজারো সৌন্দর্য পিপাসু।

গত দুই বছর করোনা ও ছত্রাকের কারণে সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামের ফুল চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাপের ভালো ফলনে সেই ক্ষতি এবার পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন তারা। তাদের আশা সব ঠিকঠাক থাকলে এবার এখান থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন তারা। বছরজুড়েই এখানে ফুল বিক্রি হয়। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ধরা হয় ফুল বিক্রির প্রধান মৌসুম। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ঘিরে এ সময় ফুল বিক্রি বাড়ে কয়েকগুণ।

সরকারি হিসাব মতে, বিরুলিয়ার গ্রামগুলোয় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। আর এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় দেড় হাজার চাষি। গোলাপ বিক্রির জন্য শ্যামপুর ও মৈস্তাপাড়ায় গড়ে উঠেছে ফুলের বাজার। চাষিরা বাগান থেকে ফুল তুলে বিকেলের মধ্যেই বাজারে নিয়ে যান। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ফুল বেচাকেনা। স্থানীয় ফড়িয়ারা দুই বাজার থেকে ফুল কিনে সরাসরি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে এই ফুল বিক্রি করেন।

পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করা স্থানীয় মোক্তার হোসেন জানান, ২০২০/২১ এই দুই বছর করোনা আর গতবছর ফুলগাছে অজ্ঞাত ছত্রাক রোগের আক্রমণের কারণে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। তবে এবছর আগে থেকেই ছত্রাক প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আল্লাহর রহমতে গোলাপের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বেচাবিক্রিও বেশ ভালো, আমাদের এখানের ফুলের প্রচুর চাহিদা আছে এবং কাস্টমারও অনেক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দর্শনার্থীরা যারা এখানে ঘুরতে আসে তাদের কাছে আমরা খুচরা মূল্যে ফুল বিক্রি করে থাকি আর সন্ধ্যার পর আমাদের স্থানীয় ফুল বাজারে পাইকারি বিক্রি করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যারা ফুল চাষি তারা মূলত সারা বছর কয়েকটি বিশেষ দিবসের অপেক্ষায় থাকি। এই যেমন এই ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের তিনটি বিশেষ দিবস রয়েছে— পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস। বাগানভর্তি ফুল থাকায় এবার এই তিন দিবসে ইনশা আল্লাহ ভালো দামে ফুল বিক্রি করে গত বছরের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আশা করছি।

আরেক ফুলচাষি ফকির চাঁন জানান, এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো পেয়েছেন। তবে তার শঙ্কার কারণ ইদানীং কাঁচা ফুলের বাজারে ঢুকে পড়ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা প্লাস্টিকের ফুল। এতে বাজারে কাঁচা ফুলের কদর কিছুটা কমছে এবং যতদিন যাচ্ছে প্লাস্টিক ফুলের বাজার ততই বড় হচ্ছে। তাই তিনি সরকারের কাছে এই প্লাস্টিকের ফুল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার আহবান জানান।

এদিকে, রাজধানী ও আশপাশের মানুষ এই গোলাপ গ্রামে আসেন বুকভরে খানিকটা অক্সিজেন নিতে। তাদের সবার মাঝেই কাজ করে অন্যরকম চাঞ্চল্য আর মুখরতা। নারীদের বেশির ভাগই এসেছেন গোলাপের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ি পরে। আর পুরুষদের পাঞ্জাবিতেও আছে প্রকৃতির নানা রঙ। দুদিন পরেই ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সে উপলক্ষে কাটা পড়বে বাগানের বেশির ভাগ ফুল। এ জন্যই বোধ করি এখন গোলাপ গ্রামে এত ভিড়।

উত্তরা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী নিতু বলেন, চারদিকে এত ফুল। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। আমরা প্রায়ই আসি এখানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে আর ঘুরতে। এখানে আসলেই আমি হাতভর্তি গোলাপ কিনি। দোকানের চেয়ে অনেক কমদামে ফুল পাওয়া যায় এখানে। সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস তাই সবাই আসবেন এখানে এবং নিজের প্রিয়জনকে ফুল কিনে উপহার দিবেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিবারসহ ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী সুজন রায় বলেন, এই গোলাপ বাগানের কথা অনেক শুনেছি তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসলাম। এখানে এসে সত্যিই খুব ভালো লাগছে পরিবেশটা অনেক সুন্দর এবং এখানের লোকজনের ব্যবহারও খুব আন্তরিক। আমরা বাগানে ঢুকে বাচ্চাকে নিয়ে ছবি তুলেছি ফুলও কিনেছে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, গত তিন বছর করোনা এবং ছত্রাক সংক্রমণের কারণে বিরুলিয়ার ফুল চাষিরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এ বছর চাষিরা যাতে ফুলের ভালো ফলন এবং এর ন্যায্যমূল্য পান সেই বিষয়টি বিবেচনা করে আমাদের কৃষি বিভাগ কর্তৃক তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি বিগত বছরগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে এবার সাভারের ফুল চাষিরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে