গুরুদাসপুরে আদম বেপারির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব ৬ পরিবার
এসএম ইসাহক আলী রাজু, গুরুদাসপুর : নাটোরের গুরুদাসপুরে আদম বেপারির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব ৬ পরিবার। মহাজনী ঋণের টাকায় ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে চেয়ে ছিলেন আছিয়া বেওয়া (৪৫)। এজন্য আদম ব্যপারি আমিরুল ইসলামকে ৩ লাখ ১০ টাকাও দিয়েছিলেন। তবে ছেলের বিদেশ যাওয়া হয়নি। সেই শোকে স্বামী বেলাল হোসেনের অকাল মৃত্যু হয়েছে। তার পরও ফেরত পাননি আদম ব্যপারিকে দেওয়া টাকা।
উপরন্ত মাঠের জমি বিক্রির টাকা কিঞ্চিতে শোধ করতে হচ্ছে মহাজনী ঋণ। অথচ আদম ব্যপারি আমিরুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা ফেরত পেতে ধরণা দিতে হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। নামমাত্র চেক দিয়ে সটকে পড়েছেন আদম ব্যপারী আমিরুল ইসলাম। স্বামী মৃত্যুর শোক, ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে না পারা আর মহাজনি ঋণের চাপে এখন মৃত্যু পথযাত্রী আছিয়া বেওয়াও। আছিয়া বেওয়া গুরুদাসপুর পৌর সদরের উত্তরনারড়িবাড়ি মহল্লার মরহুম বেলাল হোসেনের স্ত্রী। আদম ব্যপারি আমিরুল পৌর সদরের দক্ষিণ নারিবাড়ি মহল্লার মৃত মোস্তফার ছেলে।
আছিয়া বেওয়া জানালেন, ছেলে রাব্বিকে ব্রুনাই যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছিলেন আমিরুল। সেসময় ব্রুনাইয়ে ভালো বেতনে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে ছিলেন। বলেছিলেন সংসারের দৈণ্যতা দূর হয়ে ফিরবে স্বচ্চলতা। অথচ ২০২০ সালের ১৩ মে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন আদম ব্যাপারি। ছেলে রাব্বানি বিদেশ যেতে না পারায় ঋণের টাকা শোধ করতে বেড়ে যায় চাপ। চাপ সামলাতে না পেরে মারা গেছেন রাব্বির বাবা। এখন ছোট এই ছেলেটিকে নিয়ে তাদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এঘটনায় আদম ব্যপারির ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় আদালতে চেক ডিজওনারের মামলা হয়েছে।
এই আদম ব্যপারি আমিরুল ইসলমের খপ্পরে পরে শুধু যে আছিয়া বেওয়াই সর্বশান্ত হয়েছেন তা নয়। তার মতো দিনহীন আরো ৫টি পরিবার নিঃশ^ হয়েছে। আছিয়া বেওয়ার মতো সাইকেল মেকার আলালের ছেলে আশিককে বিদেশ পাঠাতে ওই আদম ব্যপারিকে ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে ছিলেন। আশিকও বিদেশ যেতে পারেনি।
সাইকেল মেকার আলাল উদ্দিন জানান, পুড়নো সাইকেলের যন্ত্রাংশ ঠিক করে চলে আমার সংসার। তার পরেও ঋণ করে ২০২০ সালে বিদেশ পাঠানোর জন্য আছিয়া বেওয়ার সাথে তিনিসহ আরো ৪জনের মোট প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ছিলেন ব্যপারি আমিরুল ইসলমকে। সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন আমিরুল ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, ছেলে বিদেশ গিয়ে ভালো চাকুরি করবে। সেই আয়ে ঋণ শোধ হবে। সংসারের অভাবÑঅনটনও দূর হবে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সয় সম্বল হারিয়ে আমরাা এখন নিঃশ^ প্রায়। সাইকেল ঠিক করে দিন শেষে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। ঋণ শোধ করবো কি করে। ওই আদম ব্যাপারিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে টাকা উদ্ধারের দাবি জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গুরুদাসপুর উপজেলা পাটপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদিন, ফারুক হোসেন, বিন্যাবাড়ি গ্রামের এরশাদ আলী ও দক্ষিণ নাড়িবাড়ীর আদম আলী দালাল আমিরুল ইসলামকে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ বিদেশ যেতে পারেননি। তারা জানান, কেউ ঋণ করে, কেউ ভিটে মাটি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। কিন্তু বিদেশ যেতে পারেননি। ফলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক ভাবেও তারা হেয় হচ্ছেন। আদম ব্যাপারি আমিরুলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে টাকা উদ্ধাররের দাবি জানান তারা। অভিযুক্ত আমিরুল ইসলাম পলাতক থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিন জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়না পাওয়া মাত্রই আমিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারে পুলিশ জোর চেষ্টা চালাবে।