ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাশরুম চাষে সবজি বিক্রেতার সাফল্য

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩; সময়: ১:২২ pm |
ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাশরুম চাষে সবজি বিক্রেতার সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ : লকডাউনের সময় ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হন নওগাঁর সবজি বিক্রেতা সাগর আলী। মাগুরা জেলায় প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজিতে প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করেন মাশরুম চাষ। এক বছরের মাথায় লাভের মুখ দেখায় এখন বড় পরিসরে বানিজ্যকভাবে শুরু করেছেন মাশরুম চাষ। সরকারী সহযোগিতায় তার মাশরুম খামারে শুরু করতে চান প্রশিক্ষন কেন্দ্র। খুব কম সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখায় ছড়িয়ে দিতে চান জেলাজুড়ে।

সবজি বিক্রেতা সাগর আলী নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তপুর ইউনিয়নের বেনী-ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা। মাশরুম চাষ করে তা বিক্রি করে সংসারেও ফিরছেন আর্থিক স্বচ্ছলতা। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ তার মাশরুম খামার দেখতে এবং কিনতে আসেন প্রতিদিনই।

দুই কাঠা জমির উপরে টিন দিয়ে ঘর তৈরি করেছেন। ওই ঘরে কটের সুতো দিয়ে ঝুলে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ৩শ টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট)। সেই পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাচ্ছে মাশরুম। সেখান থেকেই কেটে বাজারজাত বা বিক্রি করছেন তিনি। এছাড়াও প্রতিদিন তার খামারে মাশরুম কিনতে ও দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে উঠছেন পুষ্টগুনে ভরপুর এই মাশরুম চাষে।

দর্শনার্থীরা জানান- সাগর ভাই তার বাড়ির পাশে মাশরুম চাষ করেছেন। এই জন্য দেখতে আসলাম। মাশরুম চাষ সম্পর্কে আমাদের পূর্বে জানা ছিল না। এমনকি মাশরুমের নামও জানা ছিল না। কম খরচে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তিনি। তাই চিন্তাভাবনা করছি তার কাছ থেকে মাশরুম চাষ শিখে আমিও করবো। এছাড়া তার খামারে তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বাবাকে সাহায্য করে থাকে। সময়মত পানি দেয়া, পরিচর্যা করা, বাজারজাতকরনের প্যাকেট করা থেকে নানান কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

সাগর আলী জানান- নওগাঁ শহরের সিও অফিস বাজারে ছোট্ট একটা দোকান বসিয়ে সেখানেই সবজি বিক্রে করি। ১ বছর আগে সবজি বিক্রির ফাঁকে ইউটিউবে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার একটি ভিডিও দেখি। এরপর চিন্তা করি কিভাবে অবসর সময়ে মাশরুম চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরানো যায়। এরপর যশোরের মাগুরা ড্রিম মাশরুম সেন্টারে গিয়ে চার দিনের প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার সময় সেখান থেকে অল্প কিছু বিজ দিয়েছিল। সেই বীজ নিয়ে এসে ১৬শ টাকা খরচ করে প্রথমে ৩০টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) তৈরি করি। পরে সেখান থেকে ৭ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করি। তারপর পাহাড়পুর বাজারে একটি ঘর তৈরি করে সেখানে ৬ মাস মাশরুম চাষ করে অনেক টাকা লাভ দেখতে পায়। পরে বাড়ির পাশে নিজের দুই কাটা জায়গায় ঘিরে সবজি বিক্রির পাশাপাশি মাশরুম চাষ শুরু করি।

বর্তমানে খামারে ৩শ টি অয়েস্টার জাতের মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) রয়েছে। সবকিছু মিলে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একেকটি স্পন প্যাকেট তৈরি করার ৩০ দিন পর থেকে মাশরুম আসা শুরু হয়েছে। গত পাঁচ দিন থেকে মাশরুম উঠতে শুরু করেছে। পাঁচ দিনেই ৬ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেছি। প্রথম অবস্থায় একটি স্পন প্যাকেট থেকে ২৪০ থেকে ৩শ টাকার মাশরুম বিক্রি হচ্ছে। এভাবে আরও দুই মাস একেকটি স্পন প্যাকেট থেকে ৪ বার মাশরুম পাওয়া যাবে। বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে মাশরুমের। প্রতিদিন বিভিন্ন চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট থেকে অর্ডার দিচ্ছে। প্রতি কেজি পাইকারি ২৫০ টাকা ও খুচরা ৩শ টাকা বিক্রি করছি। আশা করছি ভালো লাভবান হবো। সামনে আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, মাশরুম একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। মাশরুম ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অনেক উপকারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন মাশরুম চাষ শুরু হয়েছে। চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং মানুষজন ধীরে ধীরে এর ব্যাবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে। আমি মনে করি খুব অল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করা যায় এবং এটি লাভজনক একটি ব্যাবসা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
topউপরে