বিশাল এলাকাজুড়ে ধ্বংসলীলা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩; সময়: ১১:০৭ অপরাহ্ণ |
বিশাল এলাকাজুড়ে ধ্বংসলীলা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : একই দিনে ভয়াবহ দুই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া এখন মৃত্যুপুরী। এরইমধ্যে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এর ভেতর কেবল তুরস্কেই প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজার ৪১৯ জন, আর সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এই সংখ্যা।

দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর পর সেখানে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রচেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করছে, তুরস্ক এবং সিরিয়া জুড়ে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ এই ভূমিকম্পের শিকার হয়েছেন।

উপদ্রুত এলাকাগুলোর যে দিকে চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসের ছবি। উপচে পড়ছে মৃতদেহ। ভূকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ার ছবিটা ঠিক এরকমই। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া দুই দেশে ভূমিকম্পের পর থেকেই শুরু হয়েছে হাহাকার। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ এবং প্রিয়জনদের খোঁজার আর্তি।

সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবারও ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে।

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দুই দেশের হাসপাতালগুলোতে চলছে আহতদের আহাজারি। এক দিন আগেও যেগুলো বহুতল ছিলো, সোমবারের ভূমিকম্পের পর তা কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে।

একটি বিস্তীর্ণ সীমান্ত অঞ্চলের শহরগুলোতে কয়েক হাজার ভবন ধ্বসে সমতলে মিশে গেছে। ইতিমধ্যে যুদ্ধ, বিদ্রোহ, উদ্বাস্তু সঙ্কট এবং সম্প্রতি প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত এই অঞ্চলে আরও চরম দুর্দশা নেমে এসেছে। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।

হিমশীতল আবহাওয়া ও ভূমিকম্প পরবর্তী পরাঘাতের মধ্যেই তুরস্ক এবং সিরিয়ার উদ্ধারকারীরা মঙ্গলবার ধ্বসে পড়া ভবনে চাপা পড়া জীবিত লোকদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সীমিত রসদের কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্প এলাকার মানচিত্রে দেখা যায়, ওই এলাকায় দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি, এদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হবে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিলো তুরস্কের কাহরামানমারাস এবং গাজিয়েনটেপের মধ্যবর্তী এলাকা। সেখানেই ঘটেছে সবচেয়ে প্রবল ধ্বংসযজ্ঞ। দুই মিলিয়ন লোকের একটি গোটা শহরেরই ধ্বংসস্তূপে এখন শুভ্র তুষারে ঢেকে আছে। তারপরও চলছে জীবনের অনুসন্ধান।

ভূমিকম্পের কারণে কয়েক হাজার বাড়ি, হাসপাতাল ও স্কুল ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। প্রচণ্ড শীতে তারা কষ্ট পাচ্ছেন। কিছু এলাকায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নেই। তীব্র ঠান্ডা, দুর্বল ইন্টারনেট ও রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।

দুটি দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আটকে পড়া লোকজন ভিডিও, ভয়েস নোট এবং তাদের লাইভ অবস্থান পাঠাচ্ছে। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো প্রায় কেউ নেই। দ্রুত শেষ হয়ে আসছে তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা।

মঙ্গলবার দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত ব্যক্তিদের সন্ধানের কাজ আরও জোরদার করেছেন। আফটারশকের ভয়ে অনেকে আবার বৃষ্টি ও তুষারপাতের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন।

তুরস্কে প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষের ওপর ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে। দেশটিতে প্রায় পাঁচ হাজার ৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। ভূমিকম্পের পর ২৮৫টি ‘আফটারশক’ হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া ও তুরস্কে থাকা সিরীয় শরণার্থীরা বেশি অসহায় অবস্থায় আছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরোদোয়ান ১০টি রাজ্যকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ওই সব এলাকায় তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। গোটা বিশ্ব থেকে সাহায্য আসতে শুরু করেছে তুরস্কে। উদ্ধারকর্মীও পাঠিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ।

যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসের কবলে বিধ্বস্ত সিরিয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। সেখানে তুরস্ক সীমান্তের দুই পারেই বহু শরণার্থী তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন। বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা দিয়েছে। হাজার হাজার বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে সেখানে।

সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা শত শত পরিবারকে জীবিত উদ্ধারের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে আর্তি জানিয়েছে বিদ্রোহীরা। তাদের নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় শত শত মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। সেখানকার উদ্ধারকারী গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেটের উদ্ধার তৎপরতায় আন্তর্জাতিক দাতব্য গোষ্ঠীগুলোর জরুরি সহায়তার প্রয়োজন।

সোমবার ভোরের ভূমিকম্প ঝাঁকিয়ে দিয়ে গিয়েছে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সীমান্ত সংলগ্ন সিরিয়ার কিছু অংশকে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় লাফ দিয়ে দিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া হিসাব- তুরস্ক-সিরিয়ায় মারা গেছে পাঁচ হাজার মানুষ। চারপাশ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মৃতদেহ। তবু তার পাশেই ধ্বংসস্তূপে জীবনের খোঁজ চলছে সমান্তারালভাবে।

সোমবার দিবাগত রাত খোলা আকাশের নিচেই কাটিয়েছে তুরস্ক-সিরিয়ার বড় অংশ। পদে পদে কেঁপে উঠেছে মাটি। আতঙ্কের জেরে ছাদ রয়েছে এমন কিছুর নিচে আশ্রয় নিতেই ভয় পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। ফলে তুষারপাতের রাত কেটেছে বাইরেই। আগুন জ্বেলে রাস্তার ধার ঘেঁষে বসেছেন মানুষ। জমে যাওয়া শরীর আর বিভ্রান্ত মন নিয়ে আগুনের পাশে ভিড় জমিয়েছেন।

তুরস্ক-সিরিয়ার এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের নানা দেশ। বিশেষজ্ঞ দল ও নানা সরঞ্জাম দিয়ে উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তার চেষ্টা করছে তারা। স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে হতাহতদের স্মরণে সাতদিনে জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা হয়েছে সব স্কুল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে