বাগমারায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩; সময়: ৪:০৪ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগমারা : মানবন্ধন, কুশপুত্তলিকা দাহ ও বিক্ষোভের পর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার আবুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা তালিকাভূক্ত করেছে পুলিশ। তবে এখনো কোন আসামিকে গ্রেপ্তার কর হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে।

বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেছেন, আদালত থেকে আসা মামলাটি শনিবার রাতে থানায় রের্কড করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তবে মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলার সুজন পালসা গ্রামের বাসিন্দা মতিনুর রহমান বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর আদালতে চাঁদাবাজি ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে হামলা করার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বাগমারা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার নরদাশ ইউপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কৌশলে লোকজনকে হয়রানি ও চাঁদাবাজি করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন বিলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য একটি বাহিনী তৈরি করে মৎস্যচাষিদের হয়রানি করেন। মৎস্যচাষিদের বিরুদ্ধে তাঁর লোকজনদের দিয়ে অভিযোগ করে নেন। ওই অভিযোগের তদন্ত তিনি নিজেই করে হয়রানি করে থাকেন। মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে হামলা করা হয়। অনেকে হামলার শিকারও হয়েছেন।

রাজশাহী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল।

মামলার বাদির মতিনুর রহমানের অভিযোগ, সব শেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে তাঁর বাহিনী (অনুসারি) দিয়ে নরদাশের হাতিয়া বিলের মৎস্যচাষিদের ওপর ধারাল অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। বিলটিতে মাছ ধরতে গিয়ে মৎস্যচাষিরা এই হামলার শিকার হয়েছেন। এখনো তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে, আওয়ামী নেতা গোলাম সারওয়ারের শাস্তি ও গ্রেপ্তারের দাবিতে গত শনিবার সকালে উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের সুজনপালশা আমপাড়া এলাকায় ছয় গ্রামের মৎস্যচাষিরা মানবন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও তাঁর কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর কর্মসূচি পালন করেন। বিলের চারপাশের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ মৎস্যচাষিরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকালে মৎস্যচাষিদের মধ্যে বক্তব্য দেন আক্কাস আলী, রাশেদুল ইসলাম, আফজাল হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা স্থানীয় হাতিয়া বিল নিয়ন্ত্রণে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিলটিতে প্রতি বছর প্রায় সাত কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এছাড়াও উপজেলার জোঁকাবিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে রয়েছে।

জোঁকাবিলের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম অভিযোগ করেন, তাদের বিলের নিয়ন্ত্রণ নিতে আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম সারওয়ার আবুল বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছেন। এনিয়ে একজন নিহতও হয়েছেন। তাঁরা বিচার দাবি করেন।

মানবন্ধনে বক্তরা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম সারওয়ার এখনো গ্রেপ্তার হননি। মামলা দায়েরের পর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে চাষিদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়। রোববার দুপুরেও সুজন পালশা এলাকায় হাতিয়া বিলের মৎস্যচাষিরা বিক্ষোভ করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সারওয়ার তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, চাঁদা দাবি করা অযৌক্তিক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিলে মাছচাষ করলেও জমির মালিকদের কোনো টাকা দিচ্ছিলেন না। এই বিষয়ে বঞ্চিতরা তাঁর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। তবে নিষ্পত্তি করতে পারিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে