চাঙ্গা উত্তরের নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩; সময়: ১:৪৯ অপরাহ্ণ |
চাঙ্গা উত্তরের নেতাকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা তিনবারের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো রাজশাহীতে জনসভা করে গেলেন। তিনি রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন।

নির্বাচনী এই জনসভায় রাজশাহীবাসীকে ‘নৌকা প্রতীকে’ ভোটের ওয়াদা করাসহ নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই সফর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের কতটুকু অনপ্রাণিত-উজ্জীবিত করলো?

দীর্ঘ সময় পর প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন রাজশাহীর স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষও। নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতেই প্রধানমন্ত্রীর এই আগমন বলছেন নেতাকর্মীরা।

রাজশাহীর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী এসেছেন। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী এসেছিলেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাট উপজেলায়, ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পবা উপজেলায়, ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে এবং সর্বশেষ নির্বাচনী বছর ২০২৩ সালে ২৯ জানুয়ারি দলীয় জনসভায় হাজির হলেন শেখ হাসিনা। তার এই আগমনকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা ছিলো। যার রেশ আগামী নির্বাচনেও ইতিবাচকভাবেই পড়বে।

জনসভায় আসা গোদাগাড়ী উপজেলার সুজন আলী বলেন, আমি কোন দলের সমর্থন করি না। রাজনীতি বিষয়টাকে খুব একটা ইতিবাচকভাবে নেই না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আসছেন। তাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগে। তাই তাকে দেখতে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

পবা উপজেলার আশরাফুল আলম বলেন, আমি দিনমজুর। একদিন না খাটলে পেটে ভাত জোটে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য অনেক করেছেন। চালসহ অনেক সুবিধা দিয়েছেন। সেই সাথে উন্নয়নও করে যাচ্ছেন। সেই জায়গা থেকে তিনি এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে তার চোখ শীতল হয়েছে। তার খুবই ভালো লাগছে।

বাঘা উপজেলার ঝিনা গ্রামের আরশাদ আলী (৮০) বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক আগে রাজশাহীতে এসেছিলেন। ওই সময় তিনি ট্রেনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ট্রেন নিরাপদ তাই ট্রেনে জনসভায় এসেছি।

তিনি আরও বলেন, শুনেন ভাই, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশে উন্নয়ন হয়। সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হয়। তার বিকল্প নেই। আমরা আগামীতেও তাকে চাই। এই জনসভায় স্মরণকালের বড় সমাবেশে মানুষের স্রোত নেমেছিল। কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শুধু জনসভাস্থলই নয়, গোটা শহর পরিণত হয়েছিল জনারণ্যে। প্রতিটি রাস্তা ও অলিগলিতে ছিল মানুষ আর মানুষ।

রাজশাহী জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসরিন আখতার মিতা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দীর্ঘদিন করোনা থাকায় অনেক দেশে একটা স্থবিরতা ছিল। এতে করে প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীসহ গণমানুষের সাথে ভারচুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস থেকে তিনি বাইরে বের হচ্ছেন। আর রাজশাহীতেও তিনি দীর্ঘদিন পর আসলেন। তাই নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আবেগ ও উচ্ছ্বাস কাজ করছিল তাকে সরাসরি দেখা ও ভাষণ শোনার জন্য।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আমরা শুনেছি। তিনি ভোটও চাইলেন। তার ডাকে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ ভালোভাবে সাড়া দিয়েছেন। এটা আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সারাদেশে তার নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজশাহী ব্যতিক্রম ছিল না। আওয়ামীলীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে দেশের চলমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এমটাই এই বিশাল জনসভায় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, পূর্বের মতো এবারও জনসভায় নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো। শুধু শহর নয়, রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে সকল নেতা-কর্মী প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবেসে সমাবেশে এসেছেন। এই সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলো। সব বিভাজন ভুলে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর জন্য কাজ করে গেছেন। এ জনসভার রেশ দীর্ঘদিন থাকবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর এই মাদ্রাসা মাঠে অনেকবার এসেছেন, কখনও সরকারি দলে, আবার কখনও বিরোধী দলে থাকতে এসেছেন, জনসভা করেছেন। এবারের জনসভায় এই মাঠে যে পরিমাণ মানুষ হয়েছিলো, তার থেকে আট দশগুণ বেশি মানুষ বাইরেই ছিলো। আওয়ামী লীগ কর্মীরাও তার আগমনে অনেক উচ্ছ্বসিত ছিলো। ছোটখাট বিভাজন ভুলে দলের জন্য কাজ করার মানসিকতা প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে আরও সুদৃঢ় হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, রাজশাহীতে শুধু সিটি করপোরেশনকে ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেভাবে তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সেভাবেই রাজশাহীতেও এগিয়ে গেছে।

অনেকে আমাকে সফল মেয়র বলেন, রাজশাহীকে গ্রিন সিটি বলেন, নেত্রী আপনার কাছ থেকে এই সহযোগিতা না পেলে কখনও এই রকম উন্নয়ন করতে পারতাম না। এটি আপনার কাজ। আপনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ও আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। আপনি আরো অনেকদিন আমাদের মধ্যে থেকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন-এই কামনা করি।

বর্তমান বছরটি উন্নয়নের বছর উল্লেখ কওে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রাসিক মেয়র লিটন আরও বলেন, আপনার সাথে পদ্মা সেতু পার হয়েছি, আমরা আপনার সাথে মেট্রোরেলে চড়েছি, অনেক মেগা প্রকল্প শেষ হয়েছে। আগামীতে আপনার পাশে থাকতে চাই। আমরা স্লোগান দেই শেখ হাসিনা আছেন সংসদে, আর আমরা আছি রাজপথে। আপনার কারণে এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। যা কয়েক বছর আগেও ছিল না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে