ভুল ও দোষীদের চিহ্নিত করতে দুই কমিটি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩; সময়: ২:০৪ অপরাহ্ণ |
ভুল ও দোষীদের চিহ্নিত করতে দুই কমিটি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিতর্কের মুখে নতুন পাঠ্যবই নিয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটি পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তি, তথ্য বিকৃতি, ধর্মীয় উসকানিসহ বিতর্কিত অন্যান্য বিষয় চিহ্নিত করে তা সংশোধনের সুপারিশ করবে।

আরেক কমিটি এ ভুল ও বিতর্ক উসকে দিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কারও ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত তৎপরতা আছে কি না, তা তদন্ত করবে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘নতুন শিক্ষাক্রমবিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ ঘোষণা দেন। তবে এতে তিনি দুই কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেননি।

কেবল কোন কোন মন্ত্রণালয়, সংস্থা বা বিভাগ থেকে সদস্য রাখা হবে, সেই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। পাশাপাশি বলেছেন, আগামী রোববারের মধ্যে এ কমিটির গঠনকাঠামো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে পাঠ্যবইয়ে বিভ্রান্তিকর এবং উসকানিমূলক পাঠ, ছবি এবং প্রচ্ছদের দায় নিয়ে নানা পর্যালোচনা চলছে। নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির একাধিক সূত্র বলেছে, অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সদস্য এনজিও এবং বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই তৈরির কাজে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এনসিটিবির কর্মকর্তাদের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়নসংক্রান্ত কাজ তদারকি করার দায়িত্ব, লেখার নয়। তারা কেবল সাচিবিক সহায়তা দেবেন।

কিন্তু ওই সদস্য নিজের কাছের লোকদের পাঠ্যবই রচনার কাজেও নিযুক্ত করেছেন। ফলে তারা নিজের বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিটিংয়ের সম্মানি এবং শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই রচনার টাকার ভাগও নিয়েছেন। পাঠ্যবইয়েই এনসিটিবির ভেতরের কোনো কোনো কর্মকর্তা বই-প্রণেতা বনে গেছেন। তাদের নামও উল্লেখ আছে।

ওই সূত্র আরও জানায়, বই রচনার প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে অতি বামপন্থিদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্যানেল মন্ত্রণালয় পর্যন্ত অনুমোদিত হওয়ার কথা। এছাড়া পাণ্ডুলিপির খসড়া তৈরির পর জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটিতে (এনসিসিসি) অনুমোদিত হওয়ার কথা।

মিটিং করার সময় না থাকলে এনসিটিবির পূর্ণ বোর্ড এবং মন্ত্রণালয় থেকে শেষ পর্যায়ের মতামত নেওয়ার কথা। জানা যায়, প্রথম পাণ্ডুলিপি শিক্ষামন্ত্রী দেখার পর কিছু ছবি এবং পাঠ (কনটেন্ট) সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু তার নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটেনি। শুধু তাই নয়, যে দুটি বই নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, তার মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান বই সংশ্লিষ্টদের না দেখিয়ে সরাসরি মুদ্রণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে লেখকদের মধ্যে যারা নিজের মতাদর্শ পাঠ্যবইয়ে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছেন, তারা সফল হয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, দোষীদের চিহ্নিত করে মন্ত্রী শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। এনসিটিবিতে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা সহজ হতে পারে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক এই বিতর্কের সঙ্গে জড়িত আছেন, তাদের কীভাবে শাস্তির আওতায় আনা হবে, এ প্রশ্ন সামনে এসেছে। তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ওইসব শিক্ষককে ভবিষ্যতে এনসিটিবির আর কোনো কাজে ডাকা হবে না।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বেশকিছু বিষয় স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই প্রণয়নে কিছু ছবি ও পাঠ বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত হয়েছে। বইয়ের এসব ভুল ইচ্ছাকৃত নাকি ভুলবশত যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বইয়ের ভুলভ্রান্তি অবশ্যই সংশোধন করা হবে। কোনো ধরনের ধর্মীয় ও লিঙ্গবিদ্বেষ যাতে না থাকে, আমরা সেই চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ ধর্মবিরোধী কিছু করেনি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ইচ্ছা আমাদের নেই।

কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা দুটি কমিটি তৈরি করেছি। একটি কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। সেখানে স্বাস্থ্য, ধর্মীয়, পেশাগত বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। যে কেউ যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মতামত দিতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞ কমিটি তা যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করবে। কোথাও ভুল থাকলে নিশ্চয়ই সংশোধন করা হবে। কারও কোনো অস্বস্তি থাকলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, অন্য কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি, দুই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, এনসিটিবির প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হবে। পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি ও বিতর্ক ওঠা বিষয়গুলো কেউ ইচ্ছাকৃত যুক্ত করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।

এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাঠ্যবইয়ের যে ভুলগুলো চিহ্নিত হচ্ছে, সেটা খুব ইতিবাচকভাবেই দেখছি আমরা। এ ভুলগুলো শনাক্ত করতে এবং সংশোধনী পাঠাতে একটি অনলাইন ফর্ম সরবরাহ করবে মন্ত্রণালয়।

এ ফর্মে বিষয়ভিত্তিক বইগুলোর ভুল বা অসংগতি সম্পর্কে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অবহিত করার সুযোগ থাকবে। বিশেষজ্ঞরা নতুন করে সব বই পর্যালোচনা করবেন।

বইয়ের মধ্যে যেসব ভুল চিহ্নিত হবে, সেগুলো আমলে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সমাধান করবেন। সেসব সংশোধনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এক বছরে পাঠ্যবই একেবারে সঠিক করে ফেলা দুরূহ ব্যাপার। এ বছর আমরা বইগুলো পরীক্ষামূলক হিসাবে দিয়েছি। সারা বছর আমরা সবার কাছ থেকে মতামত নেব। সেই পরামর্শ অনুযায়ী পরিমার্জন পরিশীলনের সুযোগ থাকবে।

বইগুলো প্রণয়নের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের বইয়ের কোথাও যেন ধর্ম, বর্ণ, পেশা, লিঙ্গবিদ্বেষ-বৈষম্য না থাকে, এর জন্য সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ভুলটা হয়তো বড়, যা আরও আগে চিহ্নিত হওয়া দরকার ছিল, সংশোধন হওয়া দরকার ছিল। আগে না হলেও এটি নিয়ে এখন যে আলোচনা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী এ সংশোধন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক সরব। সেই মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, রাজনীতির মাঠ-সব জায়গা থেকেই আমরা বইয়ের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা শুনছি। আমরা আগেও বলেছি, বইগুলো নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা প্রণয়ন করেছি।

আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত পাচ্ছি। আমরা শিক্ষার দায়িত্বে যারা আছি এবং এ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছি, মানুষের মধ্যে বইগুলো নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেটিকে আমরা ইতিবাচক হিসাবেই দেখছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষার দুই বিভাগের সচিব কামাল হোসেন ও সোলেমান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমদ, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে