আয়োজকদের বিরুদ্ধে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩; সময়: ৫:৪২ অপরাহ্ণ |
আয়োজকদের বিরুদ্ধে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : এক টিকিটে দুই দুইটি জমজমাট আসর, মাথাই নষ্ট মামা, বেলা থাকতে মাঠে আসেন এভাবেই মাইকে প্রচার করে জয়পুরহাটের কালাইয়ে প্রতিযোগীতামূলক ফুটবল খেলার নামে মাঠে নায়ক-নায়িকাদের এনে টিকিটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে।

নতুন কৌশলে জুয়ার আসরের পরিবর্তে খেলার নামে মাঠে নায়ক-নায়িকাদে উপস্থিত করে জনসাধারনের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে এমন আসরের আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি স্থানে প্রতিযোগীতামূলক আয়োজকরা এসব নায়ক-নায়িকাদের এনে খেলার মাঠ পরিচালনা করে আসছেন।

খেলা তো নয়, যেন অর্থ হাতিয়ে নিতেই আয়োজকরা এমন উর্দ্যােগ নিয়েছেন। এ কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী ও আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পহেলা জানুয়ারী থেকে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চাকলমুয়া, লকইর ও দুরুঞ্জ গ্রামের ফসলের মাঠে ফুটবল খেলার আসর শুরু হয়েছে।

এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এসব মাঠে অর্থ হাতিয়ে নিতেই মূলত ফুটবল খেলার আয়োজন করেছেন। মুলত জুয়ার আসরের পরিবর্তে এমন কৌশল নিয়েছেন আয়োজকরা।

প্রথম রাউন্ড শেষ হওয়ার পর থেকে আয়োজকরা খেলার মাঠে বিভিন্ন পর্যায়ের নায়ক-নায়িকাদের সমাগম ঘটাচ্ছেন। আগে থেকে এলাকায় তাদের উপস্থিতির বিষয়ে মাইকে প্রচারও করা হচ্ছে।

প্রবেশ ফি বাবদ জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে আদায় করছেন। খেলা যাই হউক না কেন, নায়ক-নায়িকাদের উপস্থিত হওয়ার প্রচার শুনেই এলাকার যুবকরা হুমরি খেয়ে ভিড় জমাচ্ছেন মাঠে।

আয়োজকরা প্রথমদিকে ফাঁকা মাঠে খেলা দেখালেও পরে মাঠের চতুরদিকে কাপড় দিয়ে ঘিরে দিয়ে সুযোগ বুঝে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

মঙ্গলবার উপজেলার চাকলমুয়া খেলার মাঠে নায়িকা অপু বিশ^াসকে এনে প্রায় ১০ হাজার দর্শকের সমাগম ঘটান। সেদিন জনপ্রতি মাঠের প্রবেশ ফি ছিল ১০০ টাকা হারে।

ওইদিন আয়োজকরা প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দর্শকদের নিকট থেকে। এর আগে তারা যশোর থেকে চারজন যাত্রাপালার মেয়েকে নিয়ে এসেও হাতিয়ে নিয়েছেন অর্থ।

তাদেরকে অনুসরণ করে রোববার দুরুঞ্জ খেলার মাঠের আয়োজকরা নিয়ে আসেন নায়িকা নাসরিন ও নায়ক শ্রাবনকে। তাদের মাঠেও প্রবেশ ছিল জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে। সেদিনও প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

অর্থের লোভ সামলাতে না পেরে আবারও তারা শুক্রবার বিকেলে ব্যারিস্টার সুমনকে তাদের খেলার মাঠে উপস্থিত করেন। তার জন্য গত দুইদিন ধরে এলাকায় প্রচারও করা হয়েছে।

তার সাথে থাকবেন আরও হাফ ডজ্জন নারী। আজও ওই মাঠের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ১০০ টাকা। প্রায় সাত হাজার লোকের সমাগম হয়েছে মাঠে।

এই দুই মাঠের আয়োজকদের দেখাদেখি লকইর খেলার মাঠের আয়োজকের চিন্তা হয় একটু আলাদা। তারা নায়ক-নায়িকা নয়, বিভিন্ন যাত্রাপালার মেয়ে এনে প্রবেশ ফি ৫০ টাকা জনপ্রতি হারে নিয়ে তাদের চেয়ে বেশী টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

তারা প্রতিদিন নতুন নতুন আকর্ষণে দর্শক টানতে ফন্দি পাতাচ্ছেন। তাদের মাঠে খেলা শেষ হলেও অনেক রাত পর্যন্ত চলে নাচ-গান। এতে করে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের।

চাকলমুয়া গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বলেন, মাঠে খেলোয়ারদের খেলাই শোভা পায়, সেখানে নায়ক-নায়িকা কেন। অসৎ উর্দ্যােশে আয়োজকরা তাদের এনে এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সবাই নিরব। বাঁধা দিলেও বিপদ। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।

দুরুঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আনন্দের ছলে একদিন হলে সেটা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু প্রতিদিন হলে সেটা ব্যবসা ছাড়া কি বলা যায়। এটাও একটা জুয়ার ব্যবসা।

তাদেরকে এনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আয়োজকরা। দেখেও না দেখার ভান প্রশাসনের। আসলে সবাই এই টাকার ভাগ পায়।

লকইর গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুল হক বলেন, খেলা যেমন-তেমন হলে কি হবে, নাচ-গানতো চলছেই। আর আয়োজকদের টাকাও কামাই হচ্ছে। খেলার নামে জুয়ার আসর চলতে থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে। এসব আসর দ্রুত বন্ধ করার দাবী করছি।

চাকলমুয়া মাঠের আয়োজক মুনছুর রহমান বলেন, খেলার মাঠে দর্শক ধরে রাখতেই মুলত নায়ক-নায়িকাদের সমাগম ঘটানো হচ্ছে। তাদেরকে নিয়ে আসতে অনেক খরচও হয়। একারনে প্রবেশ ফি বাবদ জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে আমাদের কিছুই থাকে না।

দুরুঞ্জ খেলার মাঠের আয়োজক রেজাউল করিম কলেন, মাদক থেকে যুব সমাজকে বিমুখ করতেই মুলত এমন আয়োজন। টিকিট দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তাদেরকে নিয়ে আসতে টাকা দিতে হয় সেই কারনেই প্রবেশ ফি নেওয়া হচ্ছে। অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই।

লকইর মাঠের আয়োজক আফজাল হোসেন বলেন, সবাই জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে নিচ্ছেন, আমরা ৫০ টাকা হারে নিচ্ছি। তারা নিলে দোষ নেই আর আমরা নিলে কিষের দোষ। সবাই বন্ধ করলে আমরাও করবো।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, টিকিটের বিষয়ে শুনেছি, তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ করলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে