ইভিএমে ভোট: ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখছে ইসিও!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩; সময়: ১২:২০ অপরাহ্ণ |
ইভিএমে ভোট: ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখছে ইসিও!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সংরক্ষণে থাকা ও নতুন করে দুই লাখের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমন চিন্তা সফলভাবে বাস্তবায়নে মধ্য জানুয়ারিতে ইভিএম প্রকল্প অনুমোদনের তাগিদ ছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। তাই পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বিশাল আকারের প্রকল্প কাটছাঁট করতে ফের প্রস্তাব পাঠানো হয় ইসির তরফ থেকে। প্রকল্প পাসে তোড়জোড় ছিল পরিকল্পনা কমিশনেরও। কিন্তু সব চেষ্টা যেন বিফলে যেতে বসেছে!

কারণ প্রায় দুই মাস পর অনুষ্ঠিত একনেট বৈঠকে ইভিএম প্রকল্প উত্থাপন তো দূরের কথা, এ নিয়ে একনেক প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু জানতেও চাননি। ফলে পিছিয়ে যায় ইভিএম কেনার প্রকল্প। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কত আসনে ইভিএমে ভোট হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তাও বেড়ে গেল। শুধু তাই নয়, সংরক্ষণে থাকা ইভিএম ছাড়া অন্য কত আসনে ভোট করা যাবে সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে বলে মনে করছে ইসির সংশ্লিষ্টরা।

ইভিএমের প্রকল্পটি একনেক সভার কার্যতালিকায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে কোনো কিছু জানতে চাননি। আমরা নিজেরাও এই বিষয়ে কিছু জানাবার প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে  ভোট করার সিদ্ধান্ত আছে ইসির। আর সংরক্ষণে থাকা ইভিএম দিয়ে ৫০ এর কিছু বেশি আসনে ভোট করা যেতে পারে। তাই সবশেষ একনেকের পর বিষয়টি নিয়ে ইসিতেই নানা ধরণের কানাঘুষা চলছে।

ইভিএম নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে এখনো কেউ সে বিষয়ে নিশ্চিত নয়। তবুও তাদের ভরসা সরকারের ওপরেই। অবশ্য একজন কমিশনার ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন, ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে ভোটের চিন্তা করবে কমিশন।

ইভিএম নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন সিইসি। গতকাল (বুধবার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে তিনি বলেছেন, ‘ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল তা অনেকটা কেটে গেছে। তবে এটাও জানিয়েছি যে, ইভিএম নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ আদৌ ইভিএম এভেইলএবল হবে কি না। আমরা কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারব, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, ইসির হাতে দেড় লাখের মতো ইভিএম আছে। এক দিনে ১৫০ আসনে ভোট করতে হলে আরও প্রায় ২ লাখ ইভিএম প্রয়োজন। নতুন এই ইভিএম কেনার জন্য গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করে কমিশন। পরে অনুমোদনের জন্য তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে একাধিক খাতে জনবল ও অর্থ কমানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী সম্প্রতি সব ঠিকঠাক করে পরিকল্পনা কমিশনে ফাইল পাঠানো হয়।

এরপরই শুরু হয় ইভিএম নিয়ে তোড়জোড়। অফিস সময়ের পরও কাজ করেন কর্মকর্তারা। পরিকল্পনামন্ত্রীও ইভিএম প্রকল্প অনুমোদন হয়ে যাবে এমন কথা বলেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এটি তোলেনি পরিকল্পনা কমিশন। ফলে প্রকল্পটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে এখন প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এমনকি একনেকে তোলা যাবে, পাইপলাইনে এমন প্রকল্পের সংখ্যাও অনেক কম। আর পরবর্তী একনেকও লম্বা সময় বিরতিতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএমের প্রকল্পটি একনেক সভার কার্যতালিকায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে কোনো কিছু জানতে চাননি। আমরা নিজেরাও এই বিষয়ে কিছু জানাবার প্রয়োজন মনে করিনি।’ এর ফলে ইভিএম কেনার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে গেল কিনা এমন প্রশ্ন করা হয় একজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে। বাইরে আছেন বলে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলতে আগ্রহী হননি।

পরে ইসি সচিব জাহাংগীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন থেকে যে সংশোধনী আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সেই আলোকে আমরা ফাইল পাঠিয়েছি। এখন বিষয়টি কী হবে সে সিদ্ধান্ত পুরোটা সরকারের ওপর নির্ভর করে।’

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বড় ধরণের প্রকল্প একনেকে তোলার আগে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করতে হয়। ইভিএম প্রকল্প নিয়ে সভা এখনো হয়নি। অন্যদিকে আগে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হলেও এখন সভা হচ্ছে এক থেকে দেড় মাস পরপর। সে হিসেবে ইভিএম কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বেশ পিছিয়ে গেছে।

জানা গেছে, প্রকল্পের ওপর পর্যবেক্ষণসহ সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলেও ইভিএম নিয়ে পিইসি পরবর্তী ধাপ পার হতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে। সেখান থেকে সায় পেলে ইভিএম প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে পারে।

তবে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধীতার মাঝে ইসির ইভিএমে ভোটের চিন্তা নিয়ে সরকারও কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় আছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশিদের মনোভাবও বোঝার চেষ্টা করছে সরকার। অন্যদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কেউ কেউ ইভিএমের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেটাও সরকারের ভাবনায় আছে।

ইসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইভিএম কেনা না কেনা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কিছু নেই। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে একমাসের বদলে এক সপ্তাহ পর একনেকের বৈঠক ডাকলেও তো সমস্যার কিছু নেই।’

এদিকে ইভিএম প্রকল্পটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার নিয়মকানুন আছে। সে প্রক্রিয়া পার হয়েই সেটা নিষ্পত্তির পর্যায়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে পারে, বাতিলও হতে পারে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে এখন প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এমনকি একনেকে তোলা যাবে, পাইপলাইনে এমন প্রকল্পের সংখ্যাও অনেক কম। আর পরবর্তী একনেকও লম্বা সময় বিরতিতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে