রাজশাহীতে জামায়াত সমর্থকের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি দখল চেষ্টার অভিযোগ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩; সময়: ৭:১০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে জামায়াত সমর্থকের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি দখল চেষ্টার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে এক জামায়াত সমর্থকের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতার বসতবাড়ি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক দুরুল হোদার বসতবাড়িটি দখলে নিতে জামায়াত সমর্থক আব্দুল বারী নাশকতার ১০ মামলার আসামিকে নিয়ে কয়েক দফা হামলা চালিয়েছেন। করেছেন ভাঙচুর। বাড়ি না ছাড়লে ওই যুবলীগ নেতা এবং তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন আব্দুল বারী এবং ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী। এ ঘটনায় দুরুল হোদা মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে দুরুল হোদা জানান, গত বছরের ১৩ এপ্রিল তিনি রাজশাহী মহানগরীর বিসিক মোড় এলাকায় লাকি বেগম নামে একজন নারীর কাছ থেকে সোয়া পাঁচ কাঠা জমি কেনেন। লাকি বেগম পাশর্^বর্তী পবা নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এরপর তিনি ওই বছরের ৪ জুলাই জমিটি নিজের নামে খারজি করে নেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে জমিটিতে সীমানা প্রাচীর এবং বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করেন।

এরপরেই মহানগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা জামায়াত সমর্থক আব্দুল বারী তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাধা প্রদান করেন। এসময় বারী জমিটি নিজের বলে দাবি করেন। বারীকে এসময় তার মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এসময় বারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমি ছেড়ে দিতে বলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে দুরুল হোদা বলেন, গত বছরের ৮ অক্টোবর বারীর নির্দেশে সপুরা বিসিক মোড় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিয়ার নির্দেশে আমার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিনটি ঘর ভাঙচুর করে। এছাড়া বাড়ির আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি বারী এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান জিয়াসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করি।

যুবলীগ নেতা দুরুল হোদা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সন্ত্রাসী জিয়া যুবদলের রাজনীতি করতেন। ২০১৩-১৪ সালে রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াবহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় জিয়া। মহানগরীর বাটার মোড়, সাহেববাজার, শালবাগান, সপুরা এবং বিসিক মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার তথ্যপ্রমাণ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সংরক্ষিত আছে।

জিয়ার বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর এবং নাশকতার মোট ১০টি মামলা চলমান রয়েছে। জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সকলেই জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এছাড়া আমার জমি দখলের মূল পরিকেল্পনাকারী আব্দুল বারী জামায়াতের কট্রর সমর্থক ও অর্থ যোগানদাতা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করলেই এর সত্যতা পাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে দুরুল হোদা অভিযোগ করে বলেন, আমি মামলা দায়েরের পর জিয়া দম্ভোক্তি দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাঁসুয়াসহ তার একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবিটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ওই সময় আবারও জিয়া আমাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। এরপরেই জিয়াকে ১৩ অক্টোবর পুলিশ গ্রেফতার করে।

তারপরেও থেমে থাকেনি ভূমিদস্যু বারী এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান জিয়া। জামিনে ছাড়া পেয়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আবারও আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় জিয়া এবং তার বাহিনী। এসময় জিয়ার সাথে যুক্ত হয় মহানগরীর আলিফ লাম মিম ভাটার মোড় এলাকার বিশু শেখের ছেলে রঞ্জু শেখ। বাড়িতে আমি অনুপস্থিত থাকায় এসময় আমার ছেলে মিনহাজুল ইসলামকে আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় তাক করে সাত দিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেয়। বাড়ি না ছাড়লে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আবারও পরের দিন আব্দুল বারী, জিয়া এবং রঞ্জুসহ ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করি।

ভূমিদস্যু জামায়াত সমর্থক আব্দুল বারীর জালিয়াতির বিবরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুরুল হোদা বলেন, এই জমির রেকর্ডিয় মালিক সেখ হারুন ও সেখ নাজিরের পরিবর্তে একজন প্রতারক ব্যক্তি নাজির আহমেদকে বারী জমির মালিক বানিয়েছেন। প্রতারক নাজির আহমেদকে জমির ভুয়া মালিক বানিয়ে ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর একটি জাল দলিল তৈরি করেন। এর মাধ্যমে তিনি আমার দাতা লাকী বেগমের জমি আত্মসাতের চেষ্টা শুরু করেন। রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে বারীর জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। বারীর জালিয়াতির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজম্ব) আদালত মামলা করার আদেশ দিয়েছেন।

দুরুল হোদা বলেন, আমার জমির দাতা লাকী বেগম উত্তরাধিকার সূত্রে তার নানী সাপিনা বেগমের কাছ থেকে জমিটি পান। কিন্তু জমিটির জাল দলিল তৈরির জন্য ভূমিদস্যু বারী কৌশল অবলম্বন করেন। বারী জমির দলিলে অন্য ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করেন। বিষয়টি সিআইডি পুলিশের ঢাকা ফরেনসিক ল্যাবরেটির মতামতে সিআইডির ইন্সপেক্টর ও আংগুলাংক বিশারদ শাহানা বানু তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, বারী তার মামলায় আদালতে দাখিলকৃত দলিলে জমির মালিক মোসা. সাপিনা বেগমের আঙ্গুলের যে ছাপ ব্যবহার করেছেন সেটি সঠিক না। এটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সাপিনা বেগমের হাতের আঙ্গুলের সাথে ওই ছাপের মিল নেই।

এছাড়া এই জমিটির বিষয়ে আমার দাতা লাকী বেগম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর একটি আবেদন করেন। এরপর মেয়র চার কাউন্সিলরের মাধ্যমে একটি সালিশি কমিটি করে দেন। নির্ধারিত দিনে লাকী বেগম সালিশ কমিটির সামনে তথ্য প্রমাণসহ হাজির হলেও ভূমিদস্যু বারী হাজির হননি। ফলে সালিশি কমিটি লাকী বেগমের পক্ষে রায় প্রদান করেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যেও জন্য আব্দুল বারীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন না ধরার কারণে ক্ষুদেবার্তাও (মেসেজ) পাঠানো হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে