মেট্রোরেল স্টেশনের বাহিরে দীর্ঘ লাইন, ভেতরে খালি কোচ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩; সময়: ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ |
মেট্রোরেল স্টেশনের বাহিরে দীর্ঘ লাইন, ভেতরে খালি কোচ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন আগারগাঁও স্টেশনে। শিডিউল অনুযায়ী সকাল ৮টায় প্রথম ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই দীর্ঘ লাইন লেগে যায় স্টেশনে। মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন থেকে পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। বাহিরে এমন দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও ভেতরের চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ কোচ নির্ধারিত সময়ে যাত্রী ছাড়া খালি যেতে দেখা গেছে উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনে।

স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল চালুর পর কেটে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। শুরু থেকেই এই মেট্রোরেলের প্রতি রাজধানীবাসীর বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়তে প্রতিদিন অনেকে ছুটে আসেন। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের বাকী দিনগুলোতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে চলছে স্বপ্নের এই বাহন। তবে অন্যদিন স্বাভাবিক ভিড় থাকলেও শুক্রবারসহ ছুটির দিনগুলোতে বাড়তি চাপ দেখা যায় মেট্রোরেল স্টেশনে।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোর থেকেই দেখা যায় যাত্রীরা ভিড় করছেন আগারগাঁও স্টেশনে। বেলা বাড়তেই দেখা যায়- স্টেশনে গিয়ে শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন মেট্রোরেলে চড়তে। শীত উপেক্ষা করে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন মেট্রোর স্বাদ নিতে।

আগারগাঁও স্টেশনের গেইটে বিশাল লাইন তৈরি হলেও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, নির্ধারিত সময় পর একে একে সবাইকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। মূল প্লাটফর্মে জট এবং ভোগান্তি কমাতেই ধীরে ধীরে যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

যাত্রীদের এমন উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেও ট্রেন যাত্রী সংকটের কারণ খুঁজেছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কর্তৃপক্ষের কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি। এর মধ্যে অন্যতম ত্রুটি হচ্ছে- বারবার টিকিট কাউন্টার অকেজো হয়ে পড়া। গত দুই দিন (১২ ও ১৩ জানুয়ারি) আগারগাঁও এবং উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, দফায় দফায় অকেজো হয়ে পড়ছে টিকিট কাউন্টার। ১৩ জানুয়ারি প্রতিটি স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডর মেশিন গড়ে তিন বার অকেজো হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে উত্তরা অংশের টিকিট কাটার ভেন্ডর মেশিনগুলোও অকেজো হয়েছে কয়েক দফায়। সেখা কোনো কোনো মেশিন সারাদিনেও আর সচল করা যায়নি।

এদিকে উদ্বোধনের পরই মেট্রোরেলের টিকিট সংগ্রহে যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনও একই অভিযোগ মিলছে। যাত্রীর একটু চাপ বাড়লেই অকেজো হয়ে পড়ছে মেশিন। এছাড়াও মেট্রোরেলে যাতায়াতে এমআরটি পাস পেতে ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়েও কাউন্টারগুলো চালু না করা, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখাসহ নানা অভিযোগ সেবা গ্রহীতাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন হওয়ায় অনেকে নিয়ম না জানার কারণে ভুলভাবে ব্যবহার করছেন, এতে ঘটছে বিপত্তি। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সেই সমস্যা আর থাকবে না।

প্লাটফর্মে দেখা যায়- তিনটি বুথে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন যাত্রীরা (প্রতিটি স্টেশনে মোট ছয়টি)। পাশের এমআরটি লাইন আরও দীর্ঘ। গ্রাহকদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে রোভার স্কাউট সদস্যসহ দায়িত্বরতদের। টিকিট কেটে মূল প্লাটফর্মে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নেই যাত্রীদের ভিড়, কোলাহল। ট্রেন আসল। যাত্রীরা উঠে পড়লেন। নির্ধারিত সময় ছেড়ে যায় ট্রেন উত্তরা দিয়াবাড়ির উদ্দেশে।

প্রতিবেদকের এ যাত্রায় দেখা যায়, অধিকাংশ আসন খালি। কোনো কোনো কোচে হাতে গোনা দুই থেকে তিন জন যাত্রী নিয়ে ছুটছে ট্রেন। প্রথম বারের মত কেউ কেউ চড়তে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ মুহূর্তটা ধরে রাখতে তুলছেন সেলফি।

প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়ে ফাতেমা বলেন, ফজরের পর এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। তাও ছিলাম ১৫-২০ জনের পেছেনে। গেট খোলার সাথে সাথেই প্রবেশ করতে পারলেও টিকিট সংগ্রহে কিছুটা দেরি হয়।

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ জন টিকিট সংগ্রহের পরই অকেজো হয়ে যায় মেশিন। পরে অন্য মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করি। আবারও পেছনে পড়ে যাই। এত মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল- টিকিট পেলেও হয়ত ট্রেনে জায়গা পাব না। জায়গা পেলেও দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। ট্রেন প্রায় পুরোটাই খালি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট উপ প্রকল্প পরিচালক (লাইন-৬ অতিরিক্ত গণসংযোগ কর্মকর্তা) নাজমুর ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এখনও সবগুলো সিস্টেম আপডেট হচ্ছে। মেট্রোরেল আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা, সমস্যা পড়ার পর থেকে তা সমাধানে কাজ চলমান।

নাজমুর ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, নতুন হওয়ায়, অনেকে নিয়ম না জানার কারণে ভুলভাবে ব্যবহার করছেন, এতে ঘটছে বিপত্তি। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সেই সমস্যা আর থাকবে না।

উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেল আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে পল্লবী স্টেশনেও থামবে। বর্তমানে মাঝে কোনো স্টেশনে থামে না। এছাড়া ২৫ জানুয়ারি থেকে মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টার পরিবর্তে সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তবে গেট খোলা হবে ৮টা থেকে আর বন্ধ হবে ১২টায়।

গত ২৮ ডিসেম্বর বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম ধাপে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে মেট্রোরেল যাবে কমলাপুর পর্যন্ত।

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০.১ কিলোমিটার। আপাতত ১১.৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। মেট্রোরেলের মোট ১৭টি স্টেশনের মধ্যে এই অংশে আছে নয়টি স্টেশন।

উদ্বোধনের পরদিন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও ছাড়া এই অংশের বাকি সাতটি স্টেশন চালু করা হয়নি। এই স্টেশনগুলো হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া। আগামী মার্চ নাগাদ এই রুটের সব স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ শীর্ষক এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ২০১৭ সালের ২ আগস্ট।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে